রাসুলুল্লাহর (সা.) সর্বশেষ স্ত্রী ছিলেন হজরত মাইমুনা বিনতে হারিস। তার বংশপরিচয় ও নবীজির ঘরোয়া জীবনে তার অবদান আজও মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রেরণার উৎস।
৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে হারিস আল-হিলালিয়া ও হিন্দ বিনতে আউফের ঘরে জন্ম মাইমুনা (রা.)। তার প্রকৃত নাম ছিল ‘বাররা’। পরবর্তীতে নবী করিম (সা.) তার নাম পরিবর্তন করে ‘মাইমুনা’ রাখেন, যার অর্থ ‘বরকতময়’।
নবীজির পরিবার-আত্মীয়দের সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্ক। তার বোন উম্মুল ফজল লুবারা ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের মা। যিনি নবীজির (সা.) ভ্রাতুষ্পুত্র। আরেক বোন সালমা ছিলেন নবীজির চাচা হামজার স্ত্রী। তিনি ছিলেন নবীজির স্ত্রী জয়নব বিনতে খুজাইমার সৎবোন।
শাওয়াল মাসে বরকতময় বিয়ে
জীবনের এক পর্যায়ে মাইমুনা রাসুলুল্লাহর (সা.) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার গভীর ইচ্ছা পোষণ করেন। তিনি বিষয়টি তার বোন উম্মুল ফজলকে জানান। পরে উম্মুল ফজলের স্বামী আব্বাস (রা.) নবীজির কাছে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন এবং নবী করিম (সা.) তা গ্রহণ করেন।
হুদায়বিয়ার শান্তিচুক্তির পর ৭ হিজরিতে শাওয়াল মাসে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। তখন নবীজির বয়স ছিল ৬০ বছর এবং মাইমুনা (রা.)-এর বয়স ছিল ৩৬। এই বিয়ের কিছুদিন আগে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মদিনার মুসলমানরা ওমরাহ আদায় করতে মক্কা প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিলেন।
অল্প সময়ের সঙ্গ
বিবাহের পর মাত্র তিন বছর নবীজির (সা.) সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পান মাইমুনা (রা.)। নবীজির ইন্তেকালের পর তিনি আরও প্রায় ৪০ বছর মদিনায় বেঁচে ছিলেন। তিনি ছিলেন নম্র, দরদি, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষায় যত্নবান এবং ধর্মচর্চায় অত্যন্ত নিষ্ঠাবান।
ধারণা করা হয়, নবী করিম (সা.)-এর শেষ অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণ তার ঘরে প্রকাশ পেয়েছিল। পরে নবীজির স্ত্রীদের অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রা.)-এর ঘরে চলে যান।
মাইমুনা (রা.) ছিলেন মেধাবী নারী। তিনি প্রায় ১৩টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যার কিছু সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমেও সংরক্ষিত।
শেষ ইচ্ছা
৫১ হিজরিতে তিনি ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন , সরাফ নামক যে স্থানে তিনি নবীজির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হয়েছিলেন, সেই স্থানেই যেন তাকে কবর দেওয়া হয়। তার ইচ্ছা পূরণও করা হয়।
আলেমদের সর্বসম্মত মত অনুযাী, মাইমুনা (রা.)-এর সঙ্গে নবীজির (সা.) বিবাহের পরই আল্লাহ কোরআন শরিফে আয়াত নাজিল করেন, যাতে নবী করিমকে নতুন করে আর কোনো স্ত্রী গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করা হয়। এর পর নবীজির আর কোনো বিবাহ হয়নি।
মুসলিম উম্মাহর আলোকবর্তিকা
নবীজির (সা.) সব স্ত্রীই তাদের ‘উম্মাহাতুল মুমিনীন’ উপাধির প্রতি সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার করেছেন এবং তারা সত্যিই ছিলেন মুমিনদের মা। ইসলাম সংরক্ষণ ও প্রচারে তাদের ভূমিকা আজও বিশ্বের মুসলমানদের জন্য দৃষ্টান্ত।
তারা নবীজিকে ভালোবাসতেন, তার সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এবং তাদের পবিত্র জীবনচর্চা আজও মানবতার জন্য এক অনন্ত আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: