কোরআন মানুষকে সঠিক পথে দিশা প্রদান করে এবং আল্লাহকে এক ইলাহ হিসেবে মানার নির্দেশনা প্রদান করে। যারা কোরআন হিফজ করেন এবং নিজের মাঝে ধারণ করেন তারা এই শিক্ষা রপ্ত করতে পারেন। কোরআনের হাফেজরা বর্তমান সময়ের শিরক, নাস্তিকতা ও ধর্ম বিমুখ জীবনযাপন থেকে মুক্ত থেকে ধর্মীয় অনুশাসনে নিজেকে পরিচালনা করতে পারেন— এমনটাই প্রত্যাশা করেন কোরআনের অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ।
তবে শুধু কোরআন হিফজ ও মুখস্তই জীবনে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতিফলন এবং নাস্তিকতার ফাঁদ থেকে বাঁচার নিশ্চয়তা দিতে পারে না বলে মনে করেন রাবেতাতুল উলামা আল-মুসলিমিনের (রাবেতা আলেমদের সংগঠন) মহাসচিব ড. মুহাম্মদ আবদুল করিম। তিনি বলেছেন,মুখস্থ করে কোরআন শেখার পাশাপাশি প্রয়োজন এর গভীর অর্থ ও বার্তা বোঝার চেষ্টা করা।
আল-জাজিরা মুবাশিরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা তওরাতের বাহক ইহুদিদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘যাদের কাছে তওরাত ছিল, কিন্তু তারা তা ধারণ করেনি, তাদের উদাহরণ গাধার মতো, যে পিঠে বই বহন করে।’ (সুরা জুমুআ, আয়াত : ৫)। অর্থাৎ তারা তওরাত মুখস্থ করেছিল, লিখেছিলও, কিন্তু বুঝে জীবন চালায়নি। এ থেকেই স্পষ্ট—শুধু মুখস্থ করলেই মুক্তি পাওয়া যায় না।
কোরআনের হাফেজের মা-বাবাকে যে সম্মান দেবেন আল্লাহ
ড. করিম বলেন, নবীজির সাহাবারা ছিলেন কোরআনের প্রকৃত অনুসারী। তারা দশটি আয়াত মুখস্থ করতেন, তা বুঝে নিতেন, বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতেন, তারপর পরবর্তী আয়াতের দিকে অগ্রসর হতেন। এই পদ্ধতিই ছিল সঠিক এবং পরিপূর্ণ শিক্ষা-পদ্ধতি।
রাবেতাতুল উলামা আল-মুসলিমিনের মহাসচিব ড. মুহাম্মদ আবদুল করিম
কোরআন বোঝার প্রকৃত উপায়
তিনি বলেন, কোরআন বোঝার প্রকৃত উপায় শুধু মুখস্থ নয়, বরং জীবনের সঙ্গে কোরআনকে মিশিয়ে নেওয়া। নবীজি (সা.)-এর যুগে কোরআনের আয়াতগুলো জীবনের ঘটনাবলির সঙ্গে মিলিয়ে অবতীর্ণ হতো, যা মানুষকে দৃঢ় ও অটল রাখত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, অবিশ্বাসীরা বলে, কেন কোরআন একসঙ্গে অবতীর্ণ হলো না?’ আল্লাহ বলেন, ‘এভাবেই অবতীর্ণ করেছি, যেন এর মাধ্যমে তোমার হৃদয় দৃঢ় হয় এবং তা সম্পূর্ণ রূপে আস্তে আস্তে আত্মস্থ করতে পার।।’ (সুরা আল-ফুরকান, আয়াত ৩২)। অর্থাৎ জীবনের বাস্তবতায় কোরআনের বার্তা উপলব্ধিই সঠিকভাবে কোরআন বুঝার উপায়।
অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান
ড. করিম বলেন, সন্তানকে শুধু কোরআন মুখস্থ না করিয়ে বরং তাদের তাদাব্বুর বা কোরআনের ভাবনা-গবেষণায় যুক্ত করা উচিত অভিভাবকদের। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এমন পাঠচক্র বা ভিডিও ক্লাস আছে, যা শিশুদের মনে কোরআনের গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পিতা-মাতার আগ্রহ সন্তানকে কোরআনের পথে রাখে। শুরুতে তা কিছুটা কঠিন মনে হলেও এর ফল কখনো বৃথা যায় না। তবে এখন সময় এসেছে মুখস্থ থেকে বোঝাপড়ায় উত্তরণের।
সূত্র: আল জাজিরা মুবাশির
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: