মুসা (আ.) ফেরাউনের রাজদরবারে রাজকীয় শিশু হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর যখন আল্লাহ তায়ালা তাকে নবুয়ত দান করেন তখন তিনি রাজকীয় জীবন ছেড়ে সেই যুগের সাধারণ মানুষদের মতো জীবনযাপন শুরু করেন। তখন তার কাছে রাজদরবারের কোনো শান-শওকত ছিল না। একেবারে স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল তার।
তৎকালীন যুগে প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং মিসর ও পারস্যের বাদশাহরা জনসাধারণের থেকে নিজেদের আলাদা প্রমাণ করতে এবং নিজেদের মর্যাদা ও আভিজাত্য প্রকাশ করতে সোনার বালা পরিধান করত।
তখনকার সময়ে গোত্রের সর্দারদের হাতেও সোনার বালা এবং গলায় সোনার হার ও চেন পরিয়ে দেওয়া হতো। এগুলোকে তাদের বাদশা, গোত্র প্রধান হওয়ার এবং আভিজাত শ্রেণীর নিদর্শন মনে করা হতো।
মুসা (আ.) ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী ও বার্তাবাহক। সেই দিক বিবেচনায় তারও বিশেষ মর্যাদা ছিল সমাজে। কিন্তু তিনি নবুয়তের দায়িত্ব লাভের পর রাজকীয় জীবনের সব ভোগবিলাস ছেড়ে জনসাধরণের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলন। তখন তার কাছে স্বর্ণ-রূপা এবং এ জাতীয় বিলাসী ও প্রদর্শনের কোনো বস্তু ছিল না। একেবারে সাধারণ মানুষের মতো তিনি সবাইকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেন। মানুষ এবং মূর্তিকে খোদা না মেনে আল্লাহকে খোদা মানার আহ্বান করেন।
যখন তিনি সবাইকে আল্লাহর পথে আহ্বান করলেন তখন তার আহ্বান থেকে মানুষকে বিরত রাখতে ফেরাউন মুসা (আ.) সম্পর্কে বলল, সে যে মানুষকে এক রবের প্রতি আহ্বান করছে তার কথা মানার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সমাজের মানুষ প্রভাবশালী এবং অভিজাতদের কথা শুনে এবং মানে। কিন্তু তার তো বিশেষ কোনো মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য নেই। যদি থাকতো তাহলে তো তার হাতে সোনার বালা থাকা উচিত ছিল। আভিজাত হলেই না তবে মানুষ তার কথা মানতো।
পবিত্র কোরআনে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে এভাবে—
وَنَادٰی فِرۡعَوۡنُ فِیۡ قَوۡمِہٖ قَالَ یٰقَوۡمِ اَلَیۡسَ لِیۡ مُلۡکُ مِصۡرَ وَہٰذِہِ الۡاَنۡہٰرُ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِیۡ ۚ اَفَلَا تُبۡصِرُوۡنَ ؕ ٥١اَمۡ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡ ہٰذَا الَّذِیۡ ہُوَ مَہِیۡنٌ ۬ۙ وَّلَا یَکَادُ یُبِیۡنُ ٥٢فَلَوۡلَاۤ اُلۡقِیَ عَلَیۡہِ اَسۡوِرَۃٌ مِّنۡ ذَہَبٍ اَوۡ جَآءَ مَعَہُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ مُقۡتَرِنِیۡنَ ٥٣فَاسۡتَخَفَّ قَوۡمَہٗ فَاَطَاعُوۡہُ ؕ اِنَّہُمۡ کَانُوۡا قَوۡمًا فٰسِقِیۡنَ
ফেরাউন তার সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বলে ঘোষণা করল, হে আমার কওম! মিসরের রাজত্ব কি আমার হাতে নয়? এবং (দেখ) এইসব নদ-নদী আমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ না? বরং আমিই ওই ব্যক্তি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, যে অতি হীন এবং পরিষ্কার করে কথা বলাও যার পক্ষে কঠিন।
আচ্ছা, (সে যদি নবী হয়, তবে) তাকে কেন সোনার কাঁকন দেওয়া হল না। কিংবা তার সাথে দলবদ্ধভাবে ফেরেশতা আসল না কেন?
এভাবেই সে নিজ সম্প্রদায়কে বেকুব বানাল এবং তারাও তার কথা মেনে নিল। প্রকৃতপক্ষে তারা সকলে ছিল পাপিষ্ঠ সম্প্রদায়। (সুরা আয-যুখরুফ, আয়াত : ৫১-৫৩)
অর্থাৎ, এর মাধ্যমে ফেরাউন বুঝাতে চেয়েছিল দুনিয়ার রাজা-বাদশাহরা কোন ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ করলে তারা তাকে রাজদরবারে স্বর্ণ দিয়ে পুরস্কৃত করে। তাহলে যে ব্যক্তি নিজেকে নবী দাবি করছে সে যদি সত্যিই নবী হতো তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার হাতে স্বর্ণবলয় পরানো হত। অথবা তার সাথে ফেরেশতাগণ দল বেঁধে আগমন করত।
মোটকথা ফেরাউন এসব কথাবার্তা বলে তার সম্প্রদায়কে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছিল এবং সে সফল হয়েছিল, ফলে তারা তার কথা মেনে নিয়েছিল ও আল্লাহর ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: