[email protected] ঢাকা | মঙ্গলবার, ২৮শে অক্টোবর ২০২৫, ১৩ই কার্তিক ১৪৩২
thecitybank.com

ইসফাহানে সঙ্গে মিশে আছে যে ইসলামী ঐতিহ্যের গৌরব

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
২৭ অক্টোবার ২০২৫, ১৫:৪২

ছবি: সংগ্রহীত
এক সময় বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ও নগরী হিসেবে পরিচিত ছিল ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইসফাহান। ইতিহাস, স্থাপত্য ও শিল্পকলার অনন্য সমন্বয়ে গড়া এই শহরকে এক সময় বলা হতো ইসফাহান নেসফে জাহান, অর্থাৎ ইসফাহান হলো অর্ধেক দুনিয়া।
 
ইতিহাস, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ইসফাহান এখনও বিশ্বের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হিসেবে খ্যাত। এক সময় শহরটি ইরানের রাজধানী ছিল।
 
ইসফাহানের ইতিহাস বিস্তৃত। আখেমেনিদ সাম্রাজ্যের যুগ থেকে শুরু করে কাজার রাজবংশ পর্যন্ত ১৪টি সাম্রাজ্যের শাসন দেখেছে এই শহর। প্রতিটি যুগেই এখানে ঘটেছে সমৃদ্ধি ও পতনের বিভিন্ন অধ্যায়।
 
আখেমেনিদ থেকে সেলজুক যুগ 
 
খ্রিষ্টীয় ৬৫১ সাল থেকে ১২২০ সাল পর্যন্ত ইরান আরব শাসন থেকে মুক্ত হয়ে নিজস্ব পারস্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এই সময়েই গড়ে ওঠে শহরের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা জামে মসজিদ। নিজামুল মুলক নির্মিত এই মসজিদের গম্বুজ আজও সেলজুক স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। শতাব্দী পেরিয়ে ২০শ শতক পর্যন্ত মসজিদটির সম্প্রসারণ অব্যাহত ছিল।
 
ইলখান থেকে সাফাভি রাজবংশ পর্যন্ত
ইলখান’ নামে পরিচিত শাসকগোষ্ঠীর আমলে শাসক ওলজেইতু খান শিল্প ও স্থাপত্যে বিশেষ আগ্রহ দেখান। তার আমলে জামে মসজিদে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন স্টাকো মেহরাব— যা আজও ইরানি শিল্পকলার এক অনন্য নিদর্শন। তিনিই ছিলেন প্রথম শাসক, যিনি শিয়া মতবাদ গ্রহণ করেন।
 
ইসলামী ঐতিহ্যের সাক্ষী চীনের প্রাচীন হুয়াইশেং মসজিদ
এরপরের যুগে কবি হাফেজ শিরাজির আবির্ভাব ঘটে, যিনি মুজাফফারিদ শাসনামলে পারস্য সাহিত্যকে শিখরে পৌঁছে দেন। ওই সময় নির্মিত হয় দারব-ই-ইমান নামে একটি সমাধি কমপ্লেক্স। এখানে বিভিন্ন স্থাপত্যধারার সমন্বয় দেখা যায়।
 
সাফাভি যুগ : ইসফাহানের স্বর্ণযুগ
 
ইসফাহানের স্থাপত্য ঐতিহ্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় হলো সাফাভি রাজবংশের সময়। এই সময়েই নির্মিত হয় বিখ্যাত খাজু ব্রিজ, হাকিম মসজিদ, তালার-এ আশরাফ ও মনোমুগ্ধকর প্রাসাদ চেহেল সুতুন। এই যুগকেই ইসফাহানের ‘স্বর্ণযুগ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
 
আফগান শাসন থেকে কাজার আমল
 
আফগান শাসনকালে নির্মিত একমাত্র স্থাপনা হলো জামে মসজিদের ‘ওমরের বারান্দা’। ১৭৫৩ সালে কারিম খান ক্ষমতা গ্রহণ করে রাজধানী স্থানান্তর করেন শিরাজে। পরবর্তীতে কাজার রাজবংশ তেহরানে রাজধানী সরিয়ে নেয়, যার ফলে ইসফাহানে নতুন স্থাপনা নির্মাণ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ের একমাত্র উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো মসজিদ-ই সাইয়্যেদ।
 
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ইসফাহান
 
ইসফাহানের অসংখ্য স্থাপত্য আজ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত। ব্রিটিশ ভ্রমণলেখক রবার্ট বায়রন একে তুলনা করেছেন আথেন্স ও রোমের মতো মানবতার যৌথ বিশ্রামভূমি হিসেবে।
 
অতীতের গৌরব, অনন্য স্থাপত্য আর শিল্পরসিকতার মিশেলে ইসফাহান আজও ‘ইরানের লুকানো রত্ন’ হিসেবে বিশ্বের ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে এক মোহনীয় গন্তব্য।
 
সূত্র : অ্যাবাউট ইসলাম
 
ডেস্ক/ই.ই

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর