[email protected] ঢাকা | রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১
thecitybank.com

বৃষ্টির দিনে দোয়া কবুল হয়

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
২৭ মে ২০২৪, ২০:৩৫

প্রতীকী ছবি

বৃষ্টি কোনোসময় বিপদের কারণ হলেও অধিকাংশ সময় তা আল্লাহর রহমত। বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। উত্তপ্ত পরিবেশ শীতল করেন। এছাড়াও বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সকল প্রাণীর নানাবিধ উপকার করেন। বৃষ্টির দিনের সবচেয়ে বড় কল্যাণকর দিকটি হচ্ছে- এ সময় দোয়া করলে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয়। তাই বৃষ্টির সময় বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয় প্রত্যাখ্যাত হয় না কিংবা কম প্রত্যাখ্যাত হয়। এক. আজানের সময়। দুই. বৃষ্টির সময়।’ (সহিহুল জামে: ৩০৭৮)

সুতরাং বৃষ্টির সময় আমরা যার যার চাহিদামতো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারি। দোয়ার আগে অবশ্যই আল্লাহর শুকরিয়া, আল্লাহর গুণগান এবং নবীজির ওপর দরুদ পাঠ করতে ভুলব না। কেননা তা দোয়া কবুলের মাধ্যম। এরপর আমরা ইচ্ছামতো দোয়া করব। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া তুলে ধরা হলো।

দুনিয়া ও আখেরাতে সবরকম কল্যাণের দোয়া-

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে সুখ দান কর, আখেরাতেও সুখ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (সুরা বাকারা: ২০১‍) এ দোয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়ে থাকে। নবী কারিম (স.) এ দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পাঠ করতেন। (সহিহ মুসলিম: ৭০১৬)

জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়াআউজুবিকা মিনান্না-র।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই’ (আবু দাউদ: ৭৯৩)। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহর কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে, ‘হে আল্লাহ! এই ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে, ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’ (তিরমিজি: ২৫৭২)

তাওবা-ইস্তেগফারের দোয়া-

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ ‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাজি লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আর আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি (তাওবা করছি)।’ ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। কেননা আমি তাঁর কাছে দৈনিক ১০০ বার করে তাওবা করি। (মুসলিম, মেশকাত: ২৩২৫)

বেহিসাব রিজিক লাভের দোয়া-

اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ ‘আল্লাহু লাতীফুম্ বি-ইবাদিহি ইয়ারজুকু মাইয়্যাশায়ু, ওয়া হুয়াল কাভিয়্যুল আজিজ।’ অর্থ: ‘আল্লাহ নিজের বান্দাদের প্রতি মেহেরবান। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী।’ (সুরা শুরা: ১৯)

উত্তম জীবন-যাপনের দোয়া-

اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি।’ (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪, ৩৮৯৪)

ঋণমুক্তির দোয়া-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ (বুখারি: ২৮৯৩) অথবা এই দোয়াটিও পড়া যায়—اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে সচ্ছলতা দান করো।’ (তিরমিজি: ৩৫৬৩)

মা-বাবার জন্য দোয়া-

رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ‘রাব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! রোজ কেয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১) অথবা رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ‘রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৪)

পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার দোয়া-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَأَهْلِي ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফিয়াতা ফী দীনী ওয়া আহলী’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আমার দীন ও আমার পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৭০৩)

জানা-অজানা শিরক-বিদআত থেকে বাঁচার দোয়া

ااَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ اَنْ أشْرِكَ بِكَ وَاَنَا أَعْلَمُ وَاَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন-আশরিকা বিকা, ওয়া আনা আ’লামু; ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আ’লামু’। অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি সজ্ঞানে তোমার সঙ্গে শিরক করাকরা থেকে তোমার আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত, তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫৫১)

মসিবত থেকে রক্ষার দোয়া (দোয়া ইউনুস)-

لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বলিমিন।’ অর্থ: ‘তুমি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৮)

পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার দোয়া-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَأَهْلِي ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফিয়াতা ফী দীনী ওয়া আহলী’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আমার দীন ও আমার পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৭০৩)

আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের দোয়া-

اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ ، لَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বী মিন নি’মাতিন আও বিআহাদিম মিন খালকিকা ফামিনকা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকা, লাকাল হামদু ওয়ালাকাশ-শোকরু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই সকালে আমার মাঝে বা আপনার যেকোনো সৃষ্টির মাঝে যা কিছু নেয়ামত, সব আপনারই তরফ থেকে। আপনি একক, আপনার কোনো শরিক নেই। সুতরাং আপনারই প্রশংসা, আপনারই কৃতজ্ঞতা।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৩; সহিহ ইবনে হিববান: ২৩৬১; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, ইবনুস সুন্নি: ৪২)

বৃষ্টি যেন কল্যাণ বয়ে আনে সেই দোয়া-

اللَّهُمَّ صيبا نَافِعًا উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সয়্যিবান নাফিআ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, মুষলধারে কল্যাণকর বৃষ্টি দিন।’ আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) যখন আকাশে বৃষ্টি দেখতেন, দোয়াটি পড়তেন। (বুখারি: ১০৩২; মেশকাত: ১৫০০) বৃষ্টি বেশি হলে এই দোয়াটি পড়ুন—اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا ولَا عَلَيْنَا اللَّهُمَّ علَى الآكَامِ والظِّرَابِ، وبُطُونِ الأوْدِيَةِ، ومَنَابِتِ الشَّجَرِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।’ (বুখারি: ১০১৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দোয়া কবুলের সময় উল্লেখিত দোয়াগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্র- ঢাকামেইল/আআ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর