মহররম মাসের ১০ তারিখ, যেটি ‘আশুরা’ নামে পরিচিত, ইসলামের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও পবিত্র দিন। মুসলিম সমাজে এ দিনটি ইবাদত-বন্দেগি, আত্মশুদ্ধি ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপলক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আশুরার দিন কোরআন তিলাওয়াত, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আসকার, নফল নামাজ, তসবিহ-তাহলিল, দরুদ পাঠ এবং দান-সদকার মাধ্যমে দিনটি কাটানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এর পাশাপাশি আশুরার রোজা পালনের রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও গুরুত্ব।
ইতিহাসে দেখা যায়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কায় থাকাকালীন আশুরার রোজা রাখতেন। পরবর্তীতে হিজরতের পর মদিনায় এসে তিনি দেখতে পান, ইহুদিরাও এই দিন রোজা রাখে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই দিনে হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। ইহুদিরা সেই আনন্দে রোজা রাখে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, "মুসার (আ.) সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ইহুদিদের চেয়ে অধিক ঘনিষ্ঠ। তাই আমরাও এই দিন রোজা রাখব।"
হিজরতের দ্বিতীয় বছর রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে পর্যন্ত আশুরার রোজা ছিল বাধ্যতামূলক। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর তা মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য হয়। তবে ফজিলতের দিক থেকে এটি এখনো অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ রোজা।
রাসুল (সা.) আশ্বস্ত করে বলেন, “আশা করি, যে ব্যক্তি মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তার গত এক বছরের (ছোট) গুনাহ মাফ করে দেবেন।” (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
এই রোজার গুরুত্ব এতটাই ছিল যে, মদিনার নারীরা তাদের ছোট সন্তানদেরকেও রোজা রাখাতেন। সাহাবিয়া রুবাইয়্যি (রা.) বর্ণনা করেন, “আমরা আশুরার দিন রোজা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদেরও রোজা রাখাতাম। তারা ক্ষুধায় কাঁদলে তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম, যাতে তারা ভুলে থাকে। এভাবে ইফতারের সময় হয়ে যেত।” (সহিহ বুখারি: ১৯৬০)
তবে আশুরার রোজা পালনে নবী করিম (সা.) একটি বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সাহাবিরা যখন তাকে জানালেন যে ইহুদি-খ্রিস্টানরাও এই দিন সম্মান করে, তখন তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ, আগামী বছর আমরা ৯ তারিখেও রোজা রাখব।” (সহিহ মুসলিম: ২৫৫৬)
এই হাদিসের ভিত্তিতে সাহাবিরা শুধু ১০ তারিখ নয়, বরং ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মহররম—দুই দিন রোজা রাখতেন। উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের অনুকরণ না করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলতেন, “তোমরা ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখো, যাতে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হয়।” (তিরমিজি: ৭৫৫)
আশুরার রোজা তাই শুধু অতীত ইতিহাসের স্মারক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর রহমত লাভের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ডেস্ক/আআ
মন্তব্য করুন: