[email protected] ঢাকা | শনিবার, ১৫ই মার্চ ২০২৫, ১লা চৈত্র ১৪৩১
thecitybank.com

ইউসুফ (আ.) কেন কারাগারে গিয়েছিলেন?

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
১৯ ডিসেম্বার ২০২৪, ১৫:৪৮

ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সে (ইউসুফ) বলল, হে আমার প্রতিপালক! তারা আমাকে যে দিকে ডাকছে তার চেয়ে জেলখানা আমার কাছে অধিক প্রিয়। তুমি যদি আমার থেকে তাদের অপকৌশল সরিয়ে না দাও, তাহলে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব, আর অজ্ঞদের দলে শামিল হয়ে যাব।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৩৩)

ইউসুফ (আ.) ছিলেন পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর প্রিয় পুত্র। বৈমাত্রেয় ভাইদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কূপে নিক্ষেপ হয়েছিলেন তিনি। একটি কাফেলার লোকজন ওই পথ দিয়ে যাত্রা করছিল। তারা তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে মিসরের বাদশাহর কাছে বিক্রি করে দেয়। বাদশাহর দরবারে তিনি বেড়ে উঠতে থাকেন। তিনি ছিলেন সবচেয়ে সুদর্শন যুবক। বাদশাহর স্ত্রী জুলেখা তাঁর প্রতি তুমুল আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তাকেঁ কাছে পেতে নানা প্রলোভন দিতে থাকেন। মন্দ কাজের প্রতি আহ্বান করতে থাকনে। ইউসুফ তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। একপর্যায়ে জুলেখার প্রেমে সাড়া না দেওয়ার ফলে তাঁকে বন্দি করে জেলে পাঠানো হয়।

কারাগারে ইউসুফ (আ.) মানুষকে আল্লাহর একাত্মবাদের প্রতি দাওয়াত দেন। অনেকেই তাঁর অনুসারী হলেন। কারাগারের রক্ষকও তাঁর দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন। তাঁর হাতে কারাগারে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব এল। (তাওরাত, আবির্ভাব অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: ৩৯, আয়াত: ৩৩)

ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে আরও দুজন কারাগার বন্দি ছিল। তাদের একজন ছিল মিসরের বাদশাহর শরাব পরিবেশনকারী, আরেকজন পাকশালার দারোগা। (তাওরাত, আবির্ভাব অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: ৪০, আয়াত: ১) 

তারা এক দিন তাঁর কাছে এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। তিনি প্রথমে তাদের আল্লাহর একাত্মবাদের দাওয়াত দিলেন। পরে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিলেন। কিছুদিনের মধ্যে সেই ব্যাখ্যার যথাযথ ফল পাওয়া গেল। এর মধ্যে অনেক দিন জেলে কেটে গেল ইউসুফ (আ.)-এর।

সেসময় মিসরের বাদশাহ এক স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু তিনি সঠিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা দানের কথা বাদশাহর কানে যায়। তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। ব্যাখ্যা জেনে খুবই চমৎকৃত হলেন। তিনি জেল থেকে তাঁকে মুক্তি দিলেন। মুক্তির আগে ইউসুফ (আ.) নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইলেন। জুলেখা বাধ্য হয়ে অপরাধের কথা স্বীকার করলেন। তার সাজানো নাটকের কথা বললেন।

পরে বাদশাহ ইউসুফ (আ.)-কে মিসরের অর্থমন্ত্রী বানালেন। তখন মিসর ও এর আশপাশে দুর্ভিক্ষ চলছিল। অভাবে পড়ে তার ভাইয়েরা বিশেষ দান পেতে মিসরে আসেন। কয়েকবার সাক্ষাতেও ভাইয়েরা তাকে চিনতে পারেননি। ইউসুফ চিনতে পেরেও পরিচয় গোপন রাখেন। তিনি তাদের বললেন, পরেরবার ত্রাণ পেতে হলে ছোট ভাই বেনইয়ামিনকে সঙ্গে আনতে হবে। বেনইয়ামিন হলেন ইউসুফ (আ.)–এর সহোদর।

পরে বেনইয়ামিনকে সঙ্গে করে ভাইয়েরা আবার মিসর আসেন। তখন ইউসুফ (আ.) ছোট ভাইকে কৌশলে নিজের কাছে রেখে দেন। ভাইদের কাছে বাবা ইয়াকুবের জন্য নিজের পরনের জামা দিয়ে বললেন, এটা আমার বাবার চেহারার ওপর রাখো। এতে তিনি দৃষ্টি পাবেন। ইয়াকুব (আ.) জামার বদৌলতে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছিলেন।’ এর আগে পুত্রশোকে ইয়াকুব (আ.) অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে সপরিবারে মিসরে চলে আসেন তিনি।

লেখক: রায়হান রাশেদ, আলেম ও সাংবাদিক


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর