প্রকাশিত:
২৪ আগষ্ট ২০২৫, ১৯:৩৬
নির্বাচন কমিশন দলকানা– এমন মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের রিমোট কোথায় রয়েছে? বর্তমান কমিশনের একজন বিএনপিপন্থি, কেউ অন্যপন্থি, কেউ বামপন্থি। আমরা চেয়েছিলাম বাংলাদেশপন্থি নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের যে ধরনের অ্যানোমালি (অস্বাভাবিকতা) রয়েছে তা আমরা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য খুব শিগগিরই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব।
রোববার (২৪ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে শুনানিতে মারামারির ঘটনায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, আমরা এই নির্বাচন কমিশনের বস্তুনিষ্ঠ আচরণ দেখতে চাই। এই নির্বাচন কমিশন পিক অ্যান্ড চুজ পদ্ধতিতে গঠিত হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন পক্ষের লোক রয়েছে। একজন হচ্ছে বিএনপিপন্থি, কেউ হচ্ছে অন্যপন্থি, কেউ হচ্ছে ডানপন্থি, কেউ বামপন্থি; এই যে পন্থি– আমরা চেয়েছিলাম বাংলাদেশপন্থি নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের যে ধরনের অ্যানোমালি রয়েছে, তা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য খুব শিগগিরই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন এবং সেগুলো আপনাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। আপনারা যারা সাংবাদিক রয়েছেন আপনাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। আসলে বিএনপি এবং জামায়াতসহ অন্য যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে, তারা এই নির্বাচন কমিশনে কতটা কীভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এখানে ইলেকশন কমিশনের যে কমিশনাররা রয়েছে তারা ওইসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কে কীভাবে সম্পৃক্ত এবং কে কাকে মেনটেইন করে। শুধু তো নির্বাচন কমিশন না, বাংলাদেশে যে অফিসগুলো রয়েছে সচিবালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের পুলিশ, আমরা শুনতে পাই এগুলো, আপনাদের দায়িত্ব আপনারা খুঁজে বের করবেন। আমরা শুনতে পাই এগুলো এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা খালেদা জিয়ার পিএস আব্দুস সাত্তার সাহেব, আমরা উনার নাম শুনছি, এখন উনি নাকি এখন অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সচিবালয়ের বাইরে নাকি একটা সেকেন্ড সচিবালয় এখন স্থাপন করেছে। সেগুলো গণমাধ্যমে আপনারা যারা রয়েছেন আপনাদের সেটি দায়িত্ব খুঁজে বের করা এবং জনগণের সামনে সেগুলোকে উন্মোচিত করা।
তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচন কমিশন কতিপয় পার্টির পার্টি অফিস হয়ে গেছে। আমরা বলে এসেছি বারবার করে বলে এসেছি– আমরা একটি গ্রহণযোগ্য অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে যেতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশের মানুষ আবার গুন্ডাতন্ত্রের দিকে যেতে চায় না। আমরা যদি একটি সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই, তাহলে এই নির্বাচন কমিশনকে পেশাদারিত্বের ভূমিকায় আমরা দেখতে চাই। নির্বাচন কমিশন যেভাবে দলকানা একটি দলের প্রতি, একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেভাবে নির্লজ্জের মতো কাজ করছে, আমরা যে নির্বাচনমুখী হচ্ছি সেটির অন্তরায় বলে আমরা মনে করছি। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই অবশ্যই দলমত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের যে আস্থা ছিল, সে আস্থা ক্রমশ…। আমাদের দল নিবন্ধন থেকে শুরু করে, মার্কা বরাদ্দ থেকে শুরু করে, আমাদের যে সীমানা নির্ধারণ, প্রত্যেকটি কাজে আমরা দেখেছি, আমরা যখন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মিটিং করি, আমরা দেখি তাদের এক ধরনের আচরণ থাকে, তারপর তারা একটা সময় চায়, ওই সময়ের মধ্যে কী হয় এটা তারাই বলতে পারবেন। রিমোট কন্ট্রোল নির্বাচন কমিশনের কোথায় রয়েছে এটা আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত। নির্বাচন কমিশনের যারা কমিশনার রয়েছেন, আপনারা যদি মনে করেন এই নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করতে পারবেন না, আপনাদের অন্য কেউ পরিচালিত করে, তাহলে তা আপনারা মানুষের সামনে প্রকাশ করুন।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সারা দেশে এনসিপি নেতাকর্মীদের প্রতি বিএনপির যে আচরণ সেটির আজ একটি সিগন্যাল আপনারা পেয়ে গেলেন। আপনাদেরকে সংগঠিত হতে হবে এবং বিএনপির এই যে আগ্রাসী যে মনোভাব রয়েছে, গুন্ডাতন্ত্রের যে মনোভাব রয়েছে, গুন্ডাদের তোষণ এবং পোষণের যে মনোভাব রয়েছে, সেটি যদি তারা সংস্কার না করে, তাহলে তাদের গণপ্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকাকে আমরা সবসময় প্রশ্ন করেছি, আমরা বারবার বলে এসেছি– অতীত কাঠামোতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পিক অ্যান্ড চুজ ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছে। পুরো বাংলাদেশ আজ যে ন্যক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে, এটি মূলত হচ্ছে আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে, সেই নির্বাচনে এই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কি হবে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি কি ভূমিকা রাখবে এবং পুলিশ কি দর্শকের ভূমিকা রাখবে, সেটির আজ প্রমাণ হয়ে গেছে। আপনারা দেখেছেন কীভাবে বিএনপির একজন নেত্রী বলছেন, আমরা চাইলে এখানে গুন্ডা নিয়ে আসতে পারতাম অর্থাৎ গুন্ডার পৃষ্ঠপোষকতা উনারা দিয়ে আসছেন।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, আমরা দেখছি নির্বাচন কমিশনের বাইরে লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনের অফিসের যদি এ অবস্থা হয় সারা বাংলাদেশে বিএনপির যারা রয়েছে, এই গুন্ডা, গুন্ডাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে তারা, কীভাবে ভোট কেন্দ্র দখল করবে সেটির আজকে টেস্ট ম্যাচ হয়ে গেছে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, হাসিনার সময়ে আমরা বলতে শুনেছি ২০টা হুন্ডা, ১০ গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা আর আজ রুমিন ফারহানা, যিনি হাসিনার কাছে ফ্লাটের জন্য আবেদন করেছিলেন। যিনি হাসিনার পতনে সবচেয়ে বেশি আমার মনে হয় কষ্ট পেয়েছেন। তিনি হচ্ছেন রুমিন ফারহানা। আওয়ামী লীগ থেকেও বেশি আওয়ামী লীগ পণ্য যাদেরকে মনে হয় তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা অন্যতম। উনি সবসময় বলে থাকেন, বিগত ১৫ বছর নাকি উনি অনেক ভালো ছিলেন। উনি অবশ্যই ভালো থাকবেন। কারণ উনি যত ধরনের সুবিধা রয়েছে, সব ধরনের সুবিধা নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আজ নির্বাচন কমিশন যে ভূমিকা রেখেছে আমরা সেই ভূমিকাকে সবসময় প্রশ্ন করে এসেছি। আমরা পুলিশকে দেখেছি, এখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। আমরা দেখলাম পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদেরকে কীভাবে নির্বাচন কমিশনে ঢুকতে বাধা দিয়েছে। আর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে কীভাবে ফ্রি এক্সিট দিয়েছে। পুলিশ ভাইরা যারা রয়েছেন আপনাদের প্রতি আবেদন জানাবো, দয়া করে ক্ষমতামুখী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনারা দেখেছেন নির্বাচনের আগের রাতে যে ওসিরা, যে এসপিরা, যে পুলিশরা টাকা খেয়ে নির্বাচন করে দিয়েছে, তাদের আজ পরিণতি কি হয়েছে? জনগণের পক্ষে থাকেন, জনগণ আপনাদেরকে বাঁচাবে। কোনো রাজনৈতিক দল আপনাদেরকে বাঁচাতে পারবে না। যদি জনগণ আপনাদের পাশে থাকে তাহলে এই গুন্ডা, গুন্ডার রাজনীতি বাংলাদেশে আর থাকবে না।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, আমরা এই গুন্ডা, এই গুন্ডার রাজনীতি ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছি। রুমিন ফারহানা যদি সেটি আবার বাংলাদেশে পুনর্বাসন করতে চান তাহলে হাসিনা যেখানে আছে তাদেরকেও সেখানে চলে যেতে হবে।
মন্ত্রণালয়ে তো ছাত্র প্রতিনিধিও আছে, তাহলে তারা কী কাজ করছে না– এমন প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এখানে একটা মিস ইনফরমেশন রয়েছে, আমি খোঁজ নিয়েছি। ছাত্র প্রতিনিধিদের যে বিষয়টি সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ছিল এবং সংস্কার কমিশনে ছিল। আর কোনো মন্ত্রণালয়ে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি ছিল না এবং এটা একটা কালেক্টিভ প্রপাগান্ডা।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপদেষ্টারা অবশ্যই দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। অবশ্যই না। আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে নিয়ে কথা বলেছি। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় কথা বলেছি। আইন উপদেষ্টাকে নিয়ে আমরা কথা বলেছি। উপদেষ্টাদের নামে যেসব অভিযোগ আসছে সে অভিযোগগুলো আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু সেগুলো আমাদেরকে আশাহত করে। আমরা একদম শুরু থেকেই, আমি আগস্ট মাস থেকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কথা বলে যাচ্ছি।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: