প্রকাশিত:
২৪ আগষ্ট ২০২৫, ১৪:৫২
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ভবন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল শনিবার জাকসু নির্বাচন কমিশনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকসুর ২৫টি পদে ও ২১টি আবাসিক হলে ১৫টি করে পদে নির্বাচন হবে। জাকসু নির্বাচনে ২৭৩টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। আজ রোববার থেকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে। খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ আগস্ট।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকালের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা থাকবেন ২০ জন করে ৪০ জন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করবেন। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকগুলোতে অন্তত ৫ জন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক-সংলগ্ন মীর মশাররফ হোসেন হল ফটক, জয় বাংলা ফটক (প্রান্তিক গেট), বিশমাইল ফটকে ১০ জন করে পুলিশ সদস্য থাকবেন।
কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচনের প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচজন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও নির্বাচনী বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। সবার সহযোগিতায় একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন আমরা উপহার দিতে পারব বলে আশা করছি।’
ডাকসুতে দুটি হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন দুই ছাত্রী
নারী প্রার্থী কম হওয়ার কারণ
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের জাকসু নির্বাচনের মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৮১৭ জন বা প্রায় ৪৯ শতাংশ। মোট ভোটারের অর্ধেক ছাত্রী হলেও সহসভাপতিসহ (ভিপি) জাকসুর শীর্ষ অন্তত পাঁচটি পদে ছাত্রীরা প্রার্থী হননি। অন্যান্য পদেও তাঁদের প্রার্থিতা খুবই কম। সাধারণ সম্পাদক পদে (জিএস) দুই নারী শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র তুললেও এর মধ্যে একজন এজিএস পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। অপরজনও জিএস পদ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৮ আগস্ট।
জাকসুতে নারী শিক্ষার্থীদের মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৬২টি। এর মধ্যে ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ছয়টি পদের বিপরীতে জমা পড়েছে ৪৮টি। তবে কোনো কোনো ছাত্রী একাধিক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা যেকোনো একটি পদে নির্বাচনে লড়বেন। সে হিসাবে জাকসুতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ছাত্রীর সংখ্যা আরও কম। জাকসুর মতো হল সংসদ নির্বাচনেও নারীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের সংখ্যা কম। নারীদের ১০টি হলের মধ্যে ৫টিতে নির্ধারিত ১৫ পদই পূরণ হয়নি।
জাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম হওয়ার কারণ জানতে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছাত্রীদের ১০টি হলের ৩০ জন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। এসব শিক্ষার্থী বলছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, গ্রুপ এবং ‘বট’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাঁরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। এসব কারণে অনেক ছাত্রী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে প্রার্থী হননি। আবার অনেকে পরিবারের পক্ষ থেকে সম্মতি পাননি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে যেসব নারী সামনের সারিতে ছিলেন, পরবর্তী সময়ে তাঁদের সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার বেশির ভাগ সংগঠনে যেভাবে নারীদের মাইনাস পলিটিকসের যে সংস্কৃতি ছিল, সেটা এখনো জারি রয়েছে।’
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান বলেন, ‘১৯৮০ বা ৯০ দশক থেকে জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েরা আন্দোলন–সংগ্রামে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু জাকসুর মতো একটি জায়গায় তাদের অংশগ্রহণ কম হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বট বাহিনী শুধু যে ছাত্রীদের বুলিং, স্লাটশেমিং করে তা নয়, নারী শিক্ষক যাঁরা কথা বলেন, তাঁদেরও কিন্তু আক্রমণ করে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রীদের মধ্যে জাকসু নির্বাচনের আমেজ তৈরি করতে পারেনি বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকে। দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম জাকসু। সে জায়গাটা শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্য ধারাবাহিক আলাপ-আলোচনার দরকার ছিল। ছোট ছোট গ্রুপ করে আলোচনা চলমান রেখে এরপর নির্বাচন হলে হয়তো একটু হলেও ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়ত।’
এ বিষয়ে সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের জন্য গঠনতন্ত্র নিয়ে কাজ করার সময় প্রতিটা হলে আমরা সভা করেছি। সেখানেও এসব বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। দীর্ঘ বছর পর জাকসু হচ্ছে, হয়তো সে জন্য (ছাত্রীদের) সাড়াটা কম হয়েছে। তবে এই সে শুরু হলো, এটার ধারাবাহিকতা থাকলে পরেরবার এ সংকট দূর হবে বলে আশা করি।’
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: