[email protected] ঢাকা | সোমবার, ৩০শে জুন ২০২৫, ১৬ই আষাঢ় ১৪৩২
thecitybank.com

শিবির নেতা হত্যা মামলার আসামী

আওয়ামী লীগ নেতাকে অধ্যক্ষের স্বপদে ফেরাতে জামায়াত নেতার দোঁড়ঝাপ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

প্রকাশিত:
২৬ জুন ২০২৫, ২২:৩৯

কোলাজ ছবি: চাঁপাই জার্নাল

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই পলাতক ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও আওয়ামী লীগ নেতা এজাবুল হক বুলি। পরে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) হঠাৎ করে জামায়াত নেতা লতিফুর রহমানকে সাথে নিয়ে কলেজে আসেন তিনি এবং কলেজের শিক্ষকের কক্ষে বসে বৈঠক করেন। এ নিয়ে স্থানীয় জামায়াত নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে।  তবে জামায়াত নেতা অধ্যাপক লতিফুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করেন।

রাজনৈতিক সূত্র থেকে জানা যায়, ১৯৯৬-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতি সাথে যুক্ত ছিলেন অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলি এবং তৎকালীন সময়ে সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের পিএস হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেন তিনি।  পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হোন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বিশ্বাসের কাছের লোক হিসেবে পরিচিতি অর্জন করে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে গড়ে তুলেন লাঠিয়াল বাহিনী এবং ভিন্নমত মত দমন পীড়নে কাজ করেন তিনি। এর পুরুষ্কার হিসেবে পান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ এবং জোর পূর্বক ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বনে যান মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

কলেজ সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপি নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার বদলতে ২০০২ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজে প্রভাষকের চাকরি পান এজাবুল হক বুলি। কিন্ত চাকরি পাওয়া পরে কলেজে নিয়মিত না এসে তিনি বিএনপির রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বিশ্বাসের হাত ধরেই আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত হোন এবং হঠাৎ করে শুক্রবার ছুটির দিনে ১৪ জন শিক্ষককে ডিঙিয়ে এজাবুল হক বুলিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেন সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস।  ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার পরেও তিনি নিয়মিত কলেজে আসতেন না।  মাঝে সাঝে কলেজে আসতেন ছাত্রলীগের বিশাল বহর নিয়ে।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে কলেজের ভিত্তর লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তুলে শিক্ষকের নির্যাতন, কলেজ পরিচালনায় সেচ্ছাচারিতা করেন তিনি। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে কলেজে পরিচালনায় বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, সেচ্ছাচারীতা,  হয়রানি ও শিক্ষকের হেনস্তা অভিযোগ তুলে ইউএনও, ডিসি অফিস, শিক্ষা মন্ত্রাণলয়সহ একাধিক অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন কলেজটির প্রভাষক এবং বিএনপি নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার বোন সৈয়দা রেহেনা আশরাফি রিনা।  এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার তদন্ত হয় এবং সর্বশেষ ০৫ আগষ্টের পর তদন্ত করেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জি এবং এজাবুল হক বুলিকে ১০ দিনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।  কিন্ত ০৫ আগষ্টের পরে শিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিন হত্যা মামলার এজাহার নমীয় আসামী হওয়ার পর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। পরে হাইকোর্ট আগাম জামিন নিয়ে নিন্ম আদালত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ কোর্টে আত্মসমর্পণ করলে জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজত প্রেরণ করেন বিচারক। পরে আবারও হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি। কিন্ত পলাতক থাকা অবস্থায় গত ১০ মাসের বেতন তুলেছিলেন ঠিকই তিনি।পরবর্তীতে ঈদুল আজহার পরে গত ১৬ জুন কিছু ক্ষনের জন্য কলেজে আসেন এজাবুল হক বুলি এবং গতকাল বুধবার (২৫ জুন) প্রায় আধা ঘন্টার জন্য কলেজে আসেন তিনি। এরপরে আজকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি লতিফুর রহমানের সাথে বেলা সোয়া ১২ টার দিকে আবারোও কলেজে আসেন এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে তিনি বৈঠক করেন।  অভিযোগ উঠেছে, এজাবুল হক বুলিকে স্বপদে কলেজে বসাতে চান সাবেক এমপি ও  জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে সূরার সদস্য অধ্যাপক লতিফুর রহমান। আর এজন্যই তিনি আজকে কলেজে উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা এজাবুল হক বুলিকে নিয়ে শিক্ষকের সাথে মিটিং করে। কিন্ত কলেজে  আজকে কোন অফিসিয়াল মিটিং ছিল না। মিটিং চলাকালীন সময়ে জামায়াত নেতা লতিফুর রহমানের বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে সকলের উপস্থিতিতে কয়েকজন শিক্ষককে উচ্চস্বরে ধমকও দেন তিনি।

কলেজটির বাংলা বিভাগের প্রভাষক জোনাব আলী বলেন, আজকে হঠাৎ করে লতিফুর রহমানকে সাথে নিয়ে কলেজে আসেন এজাবুল হক বুলি। আমরা তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে মানি না। আর একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তি এভাবে কাউকে নিয়ে কলেজে আসতে পারেন না। এছাড়া জামায়াত নেতা লতিফুর রহমান এক প্রকার হুমকি দিয়ে আমাদেরকে বলেছেন কলেজের পরিবেশ ঠিক রাখতে চায়, তাই কেউ বাঁ্ধা দিলে তার চাকরি করার দরকার নাই।

এজাবুল হক বুলির বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগকারী সৈয়দা রেহেনা আশরাফি রিনা বলেন, এজাবুল হক বুলি কখনোই পেশাদার শিক্ষক ছিলেন না। তিনি সব আমলেই রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। এছাড়া সাবেক এমপি অধ্যাপক লতিফুর রহমান কলেজের কেউ না। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে এই ভাবে কলেজে নিয়ে এসেছেন যা মোটেই কাম্য নয়। এতে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।

এই বিষয়ে জানতে কলেজটির অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলির মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে সূরার সদস্য অধ্যাপক লতিফুর রহমান বলেন, কলেজটি দীর্ঘ দিন অভিভাবক শূণ্য অবস্থায় রয়েছে। তাই কলেজটি সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের ডাকে আমি গিয়েছিলাম। এর আগেও শিক্ষকদের ডাকে দুইবার গিয়েছিলাম। এজাবুল হক বুলি বর্তমানে এখন সরকারি কর্মকর্তা।  সে আগেও বিএনপি ও আওয়ামী লীগ করলেও বর্তমানে কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কোন মামলা বা অভিযোগ থাকলে সেটা প্রশাসন ব্যাবস্থা নিবে।

আওয়ামী লীগ নেতা স্বপদে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা হিসেবে কলেজটি রক্ষার স্বার্থেই গিয়েছি এবং এজাবুল হক বুলিকে স্বপদে রাখা বা পুর্নবাসন করা অথবা জামায়াতের রাজনীতিতে নেওয়ার কোন পরিকল্পনা নাই।

এমএএ/আআ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর