[email protected] ঢাকা | শনিবার, ১৫ই মার্চ ২০২৫, ৩০শে ফাল্গুন ১৪৩১
thecitybank.com

মাদকরাজ্যের গডফাদার তাঁতী লীগ নেতা নুরুল

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৫

মাদকরাজ্যের গডফাদার তাঁতী লীগ নেতা নুরুল। ছবি: সংগ্রহীত

দিনমজুর থেকে চোরাচালান শুরু করেন নুরুল ইসলাম। এক সময় লোহার কাঁটা নিয়ে আসতেন ভারত থেকে। তখন থেকেই জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়। নব্বইয়ের দশকের ঘটনা এটি। ২০০০ সালের দিকে রাজধানী ঢাকার রায়ের বাজারের সুন্দরী নামে এক মাদক কারবারিকে বিয়ে করেই তার উত্থান নুরুল ইসলামের।

মাদক কারবার করে অনেকটা সিনেমার ভিলেনের স্টাইলেই কোটিপতি বনে যান। ভাই ও ভাতিজাদের নিয়ে গড়ে তোলেন মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য। মাদকের গডফাদার নুরুলের নেতৃত্বে সীমান্ত জুড়ে চলছে হেরোইনের জমজমাট ব্যবসা। নুরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি ও একই উপজেলার মাদকের স্বর্গরাজ্য চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য।

জানা গেছে, মাদকের গডফাদার নুরুল ইসলামের ভাই মাইনুল ইসলাম, মুনিরুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম ও ভাতিজা আলমগীর হোসেন মিলে গড়ে তুলেছেন মাদক ব্যবসার পারিবারিক এক সিন্ডিকেট। ভারত থেকে হেরোইন-ইয়াবাহ এনে সারা দেশে সরবরাহ করে তারা। ঢাকার রায়ের বাজার ও আশুলিয়ায় তাদের রয়েছে আলাদা সাব-সিন্ডিকেট। মাদক ব্যবসা করে নুরুল, মাইনুল, আলমগীর ও তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। এদের সবার নামেই মাদক মামলা হয়েছে একাধিক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে চারটি বাড়ি রয়েছে নুরুল ইসলামের। এরমধ্যে তিনটি চারতলা ভবন। আছে দুটি প্লট। বরেন্দ্র অঞ্চলে আছে ৩০ বিঘার বাগান। ঢাকার রায়ের বাজারে বাড়ি ও প্লট আছে। বেকার দুই ছেলেও চলাফেরা করেন দামি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলে। তবে নেই দৃশ্যমান কোনো আয়ের খাত। অভিযোগ উঠেছে, এসব করেছেন মাদক কারবারি করে। মাদকের তিনটি মামলার আসামি তিনি। নুরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। মাদকের গডফাদার হিসেবে এলাকায় পরিচিত তিনি।

আরও জানা গেছে, ভয়ঙ্কর মাদক হেরোইনের অন্যতম প্রবেশদ্বার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নটিকে মাদকের স্বর্গরাজ্য বলা হয়। দুই দশক ধরে ব্যাপক হারে হেরোইন-ফেনসিডিল ঢুকছে এ ইউনিয়ন দিয়ে। এখন ইয়াবাও আসছে বিপুল পরিমাণ। নুরুলের হাতেই এখন এ অঞ্চলের মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ। ক্ষমতার পালাবদলেও এই তাঁতী লীগ নেতার মাদক কারবারে প্রভাব পড়েনি। পদ্মা নদী পেরিয়ে ভারত থেকে আসছে মাদকদ্রব্য। বিভিন্ন মাধ্যমে ও কৌশলে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে নুরুল সিন্ডিকেট। তাদের হাত ঘুরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে হেরোইন-ফেনসিডিল ও ইয়াবা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাদক ঢোকে ভারতের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ দিয়ে। আর বাংলদেশে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নই এর অন্যতম রুট।

কৌশলী নুরুল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সদর আসনের সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এখন বিএনপিপন্থি নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এ কারণে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেলেও নুরুল এলাকাতেই আছেন। তার মাদক কারবার চলছে আগের মতোই।

অভিযোগ রয়েছে, তাকে শেল্টার দিচ্ছেন কৃষক দলের এক নেতা। পিসিপিআর বা পূর্বের মামলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩টি মাদক মামলার আসামি নুরুল ইসলাম। পিসিপিআরে পুলিশ উল্লেখ করেছেন নুরুল ইসলাম একজন অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী। তার ভাই মাইনুল ইসলাম ও ভাতিজা আলমগীরও একাধিক মাদক মামলার আসামি।

মাদক উদ্ধারকারি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ভারতের সীমান্তঘেঁষা পদ্মাপাড়ের ইউনিয়ন চরবাগডাঙ্গার বাসিন্দাদের একটি অংশ মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত। সেখানকার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাদক কারবারের নেপথ্যে জড়িত। জনপ্রতিনিধিরাও মাদক সিন্ডিকেটে জড়িয়ে আছেন। কেউ অর্থ দিয়ে, কেউ হাত বদল করে, কেউ সরাসরি যুক্ত থেকে কোনো না কোনোভাবে এসব চালান পার করতে সহযোগিতা করেন। সরকার পরিবর্তনের পরেও ওই এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এখনো তাদের কব্জাতেই রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম গডফাদার তাঁতী লীগ নেতা নুরুল মেম্বার। যাকে এলাকার সবাই মাদক কারবারি হিসেবে চেনেন। শুধু নুরুলই নয়, তার পুরো পরিবারই মাদকের সঙ্গে জড়িত। মাদকের ব্যবসা করে নুরুল ও তার ভাই ভাতিজারা আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকাসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে তাদের একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট ও বাড়ি। এতদিন নুরুল আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে মাদক সিন্ডিকেট চালিয়েছেন। ক্ষমতার পালাবদলেও বীরদর্পে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নুরুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যেখানেই মাদক সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পর্যায়ক্রমে মাদকের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা হবে। চরবাগডাঙ্গার অনেকেই আমাদের নজরদারিতে আছে। মাদক ব্যবসায় যারা অবৈধভাবে সম্পদ ও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, তাদের অবৈধ সম্পদ আইনি প্রক্রিয়ায় সরকারি কোষাগারে সুযোগ রয়েছে। এসব বিষয়েও কাজ করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

সূত্র: দেশ টিভি

ডেস্ক/আআ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর