প্রকাশিত:
৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ২২:২৯
তাড়াহুড়ো করে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না, কেউ তাড়াহুড়ো করে ক্ষমতায় যাক সেটিও চাই না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে জয়পুরহাট সার্কিট হাউস মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, স্বাধীনতা পেলাম ৫৪ বছর। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় একটি জাতি বিশ্বের দরবারে মার্যাদাবান জাতি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য যথেষ্ট সময় ছিল। কেউ যদি বলে স্বাধীনতার পরে এ জাতির জন্য ভালো কিছুই হয়নি, আমি একমত হবো না। অনেক কিছুই ভালো হয়েছে। কিন্তু যদি দুর্নীতি ও দুঃশাসন না থাকতো, তাহলে অকল্পনীয়ভাবে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতো। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে আমরা স্বাধীনতার সেই ফসলটুকু ভোগ করতে পারলাম না। সম্প্রতি দুঃশাসন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের সম্মানিত সহকর্মী, সিরিয়াল করে এক থেকে এগারোজনকে আমাদের বুক থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। মহান রবের দরবারে দোয়া করি, আল্লাহ তোমার এই গোলামদেরকে বিশেষ ভালোবাসার গোলাম হিসেবে কবুল করুন। তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। জান্নাতের দরজা তাদের জন্য তুমি নির্ধারিত করে দাও। সম্মানিত ভাইয়েরা, তাদের ওপর যখন জলুম হয়, মিথ্যা অভিযোগে বিচারের নামে অবিচার করা হয়। তখন এদেশের লাখ-কোটি মুসলমান এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। এক এক করে অনেককে জালেমদের হাতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। অনেকে পুঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, অনেকে জেলে গিয়েছেন, অনেকে দেশ ছাড়া হয়েছেন। সারা বাংলাদেশের চিত্র এক এবং অভিন্ন। আমাদের শত শত ভাই-বোনকে খুন করা হয়েছে। বোনদের মাঝে আমাদের জয়পুরহাটেও একজন বোন ছিলেন, যাকে খুন করা হয়েছে। অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হয়েছে। দফায় দফায় মামলা দিয়ে রিমান্ড নিয়ে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে। তরতাজা যুবকদেরকে ধরে নিয়ে থানার ফ্লোরে চিৎ করে শুইয়ে রাইফেলের ব্যারেল ঠেকিয়ে তাদেরকে গুলি করে পা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। চোখে গুলি করে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ রকম শত শত ঘটনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশকে তারা (আওয়ামী লীগ) নরকে পরিণত করেছিল। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত তারা মানুষ খুন করেছেন। তারা সুস্পষ্ট গণহত্যাকারী। গণহত্যার বিচার আমরা চাই। প্রত্যেকটি গণহত্যার বিচার হতে হবে। আমরা সরকারকে বলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গণহত্যাকারীদের বিচার করুন। এতে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। আহতরা একটু শান্তি খুঁজে পাবে। আঠারো কোটি মজলুম মানুষ খুশি হবে।
জামায়াতের আমির বলেন, অনেকে নির্বাচনের আগে ছেলের বাবাকে বাবা ডাকে, ছেলেকেও বাবা ডাকে। অনেকে বলেন এখন যে বাবা ডাকছেন নির্বাচনের পর মনে থাকবে তো? নির্বাচিত হওয়ার দেড় বছর পরে ওই ভদ্রলোক উনার সাথে একটু মোলাকাত করতে গেছে। বলে আপনাকে কোথায় দেখেছি মনে হয়। তখন বলে হ্যাঁ মানুষ তার বাবাকে ভুলে যায় এখন তা বুঝতে পারলাম। এগুলো ভেলকিবাজি-ধোঁকা। পাঁচ বছর স্মরণ থাকে, স্মরণ থাকে একটা জিনিস, আবার কীভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবো। এজন্য ১৪ সালের নির্বাচনে মানুষ যায় না। নির্বাচন হয় ১৮ সালে, সেখানে নিশিরাতের নির্বাচন। নির্বাচন হয় ২৪ সালে, সেখানে হয় আমি আর মামু, আমি আর ডামির নির্বাচন। একই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মানুষকে নিয়ে তামাশা করা হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার, খাওয়ার অধিকার, শিক্ষার অধিকার সমস্ত অধিকার তছনছ করে ফেলা হয়েছে। আমরা সেই অধিকারগুলো দেখতে চাই, যে তা আবার মানুষের অধিকার মানুষের কাছে ফিরে এসেছে। এজন্য লুণ্ঠুনকারীদের ক্ষমতায় আর আনা যাবে না।
জেলা জামায়তের আমির ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও বগুড়া অঞ্চল পরিচালক মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম খান। বিশেষ মেহমানের বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর বগুড়া অঞ্চল টিমের সদস্য মাওলানা আব্দুর রহিম, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জামায়াতের বগুড়া জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক, সিরাজগঞ্জ জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা শাহিনুর আলম প্রমুখ।
ডেস্ক/আআ
মন্তব্য করুন: