প্রকাশিত:
১৬ মে ২০২৫, ১২:৪৭
পদ্মা নদীর (গঙ্গা) বাংলাদেশে প্রবেশমুখে ফারাক্কা বাঁধের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। শুধু তা–ই নয়, এই বাঁধের কারণে দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের আরও চার কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চের ৪৯তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক ও নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী এ তথ্য জানান। শুক্রবার (১৬ মে) ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ফারাক্কা লং মার্চের অংশগ্রহণকারী মাহমুদ জামাল কাদেরী উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার শোভাযাত্রা ও রাজশাহী কলেজে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ উপস্থিত থাকবেন।
লিখিত বক্তব্যে মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গা–কপোতাক্ষ প্রকল্পে ৬৫ শতাংশ এলাকায় সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের ১০০ শতাংশ গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে এবং ২১ শতাংশ অগভীর নলকূপ প্রায় অকার্যকর। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হস্তচালিত পাম্প কার্যকারিতা হারিয়েছে। পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি বাড়ায় উত্তর ও উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় নলকূপের পানি এখন আর খাওয়ার উপযোগী নয়। উজানের মিঠাপানির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে ধান উৎপাদন কমেছে। সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। জমির উর্বরতা কমে যাওয়ায় কৃষিতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে।
মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব তাঁদের ভাবিয়ে তুলছে ও আতঙ্কিত করছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে বাংলাদেশের গঙ্গা ও পদ্মা নদীতে চরের বিস্তার একটি নিয়মিত ঘটনা। পাশাপাশি গঙ্গা–পদ্মার শাখা–প্রশাখাসহ শতাধিক নদ–নদী ক্রমান্বয়ে মৃত খালে রূপ নিচ্ছে। গঙ্গা একটি মরা গাঙের রূপ নিয়েছে। গঙ্গার বুক চিরে চলাচল করছে বালুবাহী ট্রাক, গরু–মহিষের গাড়ি।
তিনি বলেন, বিগত ৪০ বছরের ব্যবধানে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় গঙ্গার আয়তন নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। পানির প্রবাহ কম থাকার কারণে তলদেশ ক্রমান্বয়ে ভরাট হতে চলেছে। জলজ প্রাণী, বিশেষ করে কয়েক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গঙ্গার ডলফিন ও ঘড়িয়াল আর দেখা যায় না। আগের মতো পদ্মায় ইলিশের ঝাঁক আর আসে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৮৪ সালের তুলনায় শুষ্ক মৌসুমে রাজশাহী অংশের গঙ্গায় আয়তন কমেছে ৫০ শতাংশ। পানির গভীরতা কমেছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রবাহ কমেছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। দক্ষিণের সুন্দরবনে মিঠাপানির সরবরাহ কমেছে ৯০ শতাংশ। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারিতে গঙ্গায় পানির প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৭৩০ কিউসেক। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারিতে পানির প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৪০৯ কিউসেক। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে গঙ্গায় পানির প্রবাহ কমেছে ১৫ হাজার ৩২১ কিউসেক। যদিও সে বছর গড় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় ১৯ দশমিক ২ শতাংশ কম।
সংবাদ সম্মেলনে ফারাক্কার সমস্যা উত্তরণে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হয়। মাহবুব সিদ্দিকী জানান, ফারাক্কার সমস্যার সমাধানে করণীয় বিষয়ে দ্রুতই তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার সঙ্গে বসবেন।
ডেস্ক/আআ
মন্তব্য করুন: