প্রকাশিত:
১৬ মে ২০২৫, ১২:০৮
কবরস্থানের সভাপতি নির্ধারণে হবে নির্বাচন। এতে লড়বেন স্থানীয় যুবদল ও শ্রমিক দলের দুই নেতা। ভোট অনুষ্ঠানের জন্য গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্রের মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ও আমেজ বিরাজ করছে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য পাবনার চাটমোহরের মূলগ্রাম ইউনিয়নে এ ঘটনাটি ঘটেছে। আগামী (২৪ মে) বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) এ তিন গ্রামের মানুষের ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থানের সভাপতি পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ইতোমধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা করা হয়েছে তফশিল। দুইজন প্রার্থী মনোনয়ন ক্রয়ের পর দাখিল করেছেন। সেইসঙ্গে দেওয়া হয়েছে প্রতীক বরাদ্দ। দুই প্রার্থী নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন এলাকায়। বিষয়টি পুরো উপজেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
নির্বাচনের প্রার্থীরা হলেন—চাটমোহর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস (ছাতা) এবং মূলগ্রাম ইউনিয়ন শ্রমিদলের সভাপতি শরিফুল ইসলাম (চেয়ার)। মনোনয়নপত্র বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত ৬০ হাজার টাকায় নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। বিষয়টি প্রতিবেদককে তারা নিজেরাই নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের সমাজ নিয়ে গঠিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে সভাপতিসহ কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়।
সভাপতি কে হবেন—এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তৈরি হয় উত্তেজনা। পরে বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়ায়। এলাকাবাসী থানার ওসির কাছে দাবি জানান, ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করা হোক।
এদিকে কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টারকে নির্বাচন কমিশন প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ঘোষণা করা হয় তফশিল। বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন পুরুষকে ভোটার করে ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ৮০০ জন ভোটার গোপন ব্যালটে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য কবরস্থান কমিটির ‘সভাপতি’ নির্বাচিত করবেন।
আগামী (২৪ মে) শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কবরস্থান-সংলগ্ন ঈদগাহ্ ময়দানে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের মতোই এই নির্বাচন এলাকায় উৎসাহের আমেজ সৃষ্টি করেছে। চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা আর আপ্যায়ন! ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন কবরস্থান উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
স্থানীয় সুজন হোসেন নামের একজন বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের মতো আমাদের এলাকায় আনন্দ শুরু হয়েছে। পোস্টারও টাঙানো হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট ও দোয়া চাওয়া হচ্ছে। চায়ের দোকানে চা পান করানো থেকে শুরু করে বিড়ি-সিগারেট পর্যন্ত খাওয়ানো হচ্ছে। বিষয়গুলো ভালোই লাগছে। নির্বাচন দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসার কথা শুনেছি। ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কবরস্থানের উন্নয়ন করবেন বলে আশা করি।
কবরস্থান নির্বাচন কমিশনের প্রধান আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন, কবরস্থানটির নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে গেলে সভাপতি পদ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। কয়েকজন সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরেন তারা। আমরা চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার শরণাপন্ন হলে তিনি নির্বাচনের পরামর্শ দেন। অবশেষে ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা করার পর সভাপতি পদের জন্য ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়ে দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র ক্রয় করার পর দাখিলও করেছেন। বাছাই শেষে তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী দুজন হলেন আব্দুল কুদ্দুস (ছাতা) এবং শরিফুল ইসলাম (চেয়ার)। মনোনয়নপত্র বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত ৬০ হাজার টাকায় নির্বাচন পরিচালনা করা হবে।
চাটমোহর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম বলেন, কবরস্থানের সভাপতি নির্বাচন করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরে পূর্বের কমিটি বিষয়টি আমাকে জানায়। এখানে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জেনেছি। নির্বাচনের দিন তারা যদি মনে করেন এখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে তখন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডেস্ক/আআ
মন্তব্য করুন: