[email protected] ঢাকা | শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ই পৌষ ১৪৩২
thecitybank.com

লন্ডনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তারেক রহমান

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
১৮ ডিসেম্বার ২০২৫, ১৮:২৫

ছবি: সংগ্রহীত
২৫ ডিসেম্বর দেশে চলে যাব, দয়া করে কেউ বিদায় দিতে এয়ারপোর্টে যাবেন না
 
বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১৭, ১৮ বছর আপনাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ছিলাম। আগামী ২৫ ডিসেম্বর ইনশা আল্লাহ আমি দেশে চলে যাব। আমাকে ও আমাদের দলকে যারা ভালোবাসেন, দয়া করে কেউ বিদায় দিতে এয়ারপোর্টে যাবেন না।
 
কারণ নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দরে ভিড় করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময়) মধ্য রাতে লন্ডনের সিটি প্যাভিলিয়নে যুক্তরাজ্য বিএনপির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নবনির্বাচিত আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ এবং পরিচালনা করেন সদস্যসচিব খসরুজ্জামান খসরু।
 
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ মালেক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদসহ যুক্তরাজ্য বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, আমি বা আমরা কোনো স্বপ্নের মধ্যে নেই, আমরা পরিকল্পনার মধ্যে আছি। সেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করা হবে।
 
বক্তব্যের শুরুতে তিনি যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বিএনপির প্রবাসী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
 
তিনি বলেন, প্রায় ১৮ বছর আগে চিকিৎসার প্রয়োজনে যুক্তরাজ্যে আসার পর থেকে প্রবাসী বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাঁকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন।
 
মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু স্বাধীনতার পরই বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে সেই গণতান্ত্রিক চর্চা রুদ্ধ করা হয়।
 
তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পায়, সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পায় এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতান্ত্রিক আলোচনা শুরু হয়।
 
তারেক রহমান ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেই সংকট কাটিয়ে উৎপাদনমুখী অর্থনীতির পথে অগ্রসর হয়। তার শাসনামলে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয় এবং বাংলাদেশ খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
 
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৮১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, এই হত্যার মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারী শাসনের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতনের পর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করে এবং দেশ পুনর্গঠনের পথে এগোয়। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে দেশে প্রায় ৮৪ হাজার শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা উন্নয়নের স্পষ্ট প্রমাণ।
 
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও প্রবাসী রেমিট্যান্স এই দুটি খাতের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি সরকার এগুলোকে বিস্তৃত করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় নারীদের বিনা বেতনে শিক্ষা চালু করা হয়, যা নারী উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
 
স্বাস্থ্য খাতের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান উপজেলা পর্যায়ে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূচনা করেন, যা বেগম খালেদা জিয়ার আমলে ৫১ শয্যায় উন্নীত হয়।
 
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে, বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী রাজপথে আন্দোলন করেছে মানুষের ভোটের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য। এই আন্দোলনে কয়েক হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গুম ও নিহত হয়েছেন এবং লক্ষাধিক নেতা-কর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকেই নির্যাতনের কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
 
তারেক রহমান বলেন, ৫ আগস্ট জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এটি কোনো একক দলের নয়, এটি ছিল জনগণের আন্দোলন ও বিজয়। এটি বাংলাদেশের সব মানুষের সম্মিলিত অর্জন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী, নারী, গৃহিণীসহ সর্বস্তরের মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসায় স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।
 
তিনি সতর্ক করে বলেন, ষড়যন্ত্র থেমে নেই। অতীতে যারা একাত্তর, পঁচাত্তর, একাশি ও ছিয়ানব্বইয়ে ষড়যন্ত্র করেছে, তারা আজও সক্রিয়। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন থাকতে হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্ভীক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে।
 
তারেক রহমান দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিএনপি সরকার গঠন করবে। তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, বেকারত্ব, নারী উন্নয়ন, খেলাধুলা ও বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।
 
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যের আগে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪-এর শহীদদের মাগফিরাত কামনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেন।
 
ডেস্ক/ই.ই

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর