[email protected] ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৫, ২রা পৌষ ১৪৩২
thecitybank.com

একাত্তরের ন্যায় চব্বিশকেও সম্মান-শ্রদ্ধা করার আহ্বান জামায়াত আমিরের

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
১৫ ডিসেম্বার ২০২৫, ২০:২৫

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: সংগ্রহীত

একাত্তরের ন্যায় চব্বিশকেও সম্মান-শ্রদ্ধা করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, যদি ২৪ না হতো আমরা যারা নির্বাচনের কথা বলছি, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, আমাদের মুখ দিয়ে নির্বাচন নামক কোনো শব্দ বের হতো না। যদি ২৪ না হতো আজকে ইলেকশন কমিশনের দায়িত্বপূর্ণ জায়গা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তিনিও এই জায়গায় থাকতেন না। যদি ২৪ না হতো বর্তমানে যে ইন্টেরিম সরকার আছেন, তাদের অনেকেও জেলে থাকতেন। তাদের কেউ কেউ এর আগে জেল খেটেছেন ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে। কারো স্বামী কিডন্যাপ হয়েছেন। যদি এই ২৪ না হতো বর্তমানে ফ্যাসিবাদী আমলে যে সব মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছে, অপমান করা হয়েছে তাদের বিচার চাওয়ারও কোনো পরিবেশ এই দেশে থাকতো না।

‘সুতরাং আমি সবার প্রতি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করবো, আমরা অবশ্যই সম্মান করব ৭১-কে। তেমনিভাবে ২৪-কেও। চব্বিশ আমাদের ইতিহাসের শুধু অংশ নয়, চব্বিশ এখন আমাদের কলিজার অংশ। এই চব্বিশকে সম্মান করলেই বাংলাদেশ এবং জাতিকে সম্মান করা হবে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ‘মহান বিজয় দিবস’ উপলক্ষ্যে আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, অতীত নিয়ে পড়ে থাকা গতিশীল জাতির পরিচয় কখনো বহন করে না। আমরা অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। জাতিকে বিভক্ত নয়, আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি দেখতে চাই। আমরা এটাও চাই না যে আমাদের জাতির পর বাহির থেকে কেউ এসে খবরদারি করুক। দাদাগিরি করুক। এটা আমরা বরদাস্ত করবো না।

জামায়াত আমির বলেন, ৫৪ বছর আমাদের ভাগ্য চোরাবালিতে হারিয়ে গিয়েছিল। জনগণের ভাগ্যকে খুলে নিয়ে বুকে নিয়ে আমরা সামনের দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা এরইমধ্যে ঘোষণা করেছি বিভক্তি নয় ঐক্য, হিংসা নয় ভালোবাসা। দুর্নীতি নয় স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা। অবিচার নয়, সবার জন্য সুবিচার। বেকারত্ব নয়, হাতে হাতে কাজ। এই নিয়ে আমরা প্রিয় জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। পোড়খাওয়া জাতি গত ৫৪ বছর নানা শাসন দেখেছে। তারা এখন নতুন একটি বাংলাদেশ দেখতে চায়। অতীতের যত ময়লা আবর্জনা শাসন ব্যবস্থায় ছিল পুরোনো সেই কাসুন্দি এই জাতি আর দেখতে চায় না। এগুলো পায়ের তলায় ফেলে দুই পায়ে মাড়িয়ে সামনের দিকে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে।

জামায়াতে ইসলামী অন্যায়ের সঙ্গে আপস করার কোনো অতীত ইতিহাস নেই দাবি করে আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপারে অনেকেই আপস করেছেন। জামায়াতকে আপস করার জন্য দফায় দফায় চাপ দেওয়া হয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছে, আহ্বান জানানো হয়েছে, ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমাদের নেতৃবৃন্দ হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন। কিন্তু আপসের প্রস্তাবনাকে তারা ঘৃণা বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরাও কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবো না। তবে যেখানেই আমরা কল্যাণের সন্ধান পাবো, যার কাছেই পাবো তাকে আমরা জড়িয়ে ধরবো।

তিনি বলেন, আজ জাতি বৃহত্তর রক্ষের দিকে আগাচ্ছে। গরম ভাতে বিড়াল খুশি হয় না। কারণ বিড়ালের মুখ পুড়ে। জাতি যখন একটা স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত, সমাজ দেখার জন্য মুখিয়ে আছে, তখন ভয়ভীতি, অপপ্রচার, বিভেদ রেখা টেনে একদল উঠে পড়ে লেগেছে। তারা সেই পুরোনো পচা আমলে ফিরিয়ে নিতে চান। আপনারা চিহ্নিত হয়ে গিয়েছেন। আপনারা এতদিন বর্ণচোরা ছিলেন। এখন আপনাদের রূপ প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি এই চিহ্নিত বর্ণচোরাদের প্রতি সংশোধন হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজেদেরকে সংশোধন করুন, অনুতপ্ত হন, ক্ষমা চান। অপকর্ম থেকে বিরত থাকুন।

রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতির আমানত উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দেশকে ভুলে গিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলকানা কোনো চিন্তা করলে জাতি আমাদেরকে ক্ষমা করবে না। দেশের স্বার্থ জাতির স্বার্থকেই উপরে তুলে ধরতে হবে।

সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্তিতে ফেলে আমাদেরকে কষ্ট দেন। এ কাজ করবেন না। আপনাদের দুই একজনের কারণে গোটা সাংবাদিক সমাজ কেন লজ্জিত হবে? যাদেরকে বলা হয় জাতির বিবেক, এই বিবেককে আপনারা লজ্জা দেবেন না। যার যার জায়গা থেকে আপনারা নিজ দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করবেন। আপনারা চতুর্থ স্তম্ভ। এটা ভুলে যাবেন না। অন্য তিনটা স্তম্ভকে ঠিক রাখার দায়িত্ব আপনাদের। এইটাও আপনারা ভুলে যাবেন না।

‘সমাজের দুটি অংশের দায়িত্ব সার্বজনীন, একটি সাংবাদিক সমাজ, আরেকটি হচ্ছে রাজনৈতিক সমাজ। এই দুই সমাজকে দেখতে হবে চতুর্দিক থেকে। একদিক থেকে দেখলে চলবে না। খোলা চোখ দিয়ে দেখতে হবে বন্ধ চোখ দিয়ে নয় দুই চোখ দিয়ে দেখতে হবে, এক চোখ দিয়ে নয়।’

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখেন।

ডেস্ক/আ.আ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর