প্রকাশিত:
১৯ নভেম্বার ২০২৫, ২২:১৩
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ সম্প্রতি "পূজা শয়তানের ইবাদত" বক্তব্য দিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত ও সমালোচিত হোন।
এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারন সম্পাদক সন্তোষ শর্মা এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার ঘোষ ও সাধারন সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেড সুমন কুমার রায় নামের একজন আইনজীবী হারুনুর রশিদকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহবান জানিয়েছেন।
তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) নিজের ফেসবুক টাইম লাইনে একটি দীর্ঘ স্টাস্টাস দেন হারুনুর রশিদ। কিন্ত তার দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাস্টাসে মূলত তিনি সমালোচিত বক্তব্যটি কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন এবং ক্ষমা না চেয়ে বরং নিজের পক্ষে সাফাই এবং জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট শিশির মনিরকে দোষারোপ করেছেন।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে স্টাস্টাসটি তুলে ধরা হলো:
নিজেদের ইসলামের ভ্যানগার্ড দাবি করা, জান্নাতের টিকেট বিক্রি করা দল জামাতের নেতা অ্যাডভোকেট শিশির মনির কিছুদিন আগে বলেন, "রোজা আর পূজা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ"। আরও বলেন, “এই বিষ্ণু, এই কৃষ্ণ, এই মোহাম্মদ, এই মুসা, এই ইসা সবাই আমাদের সামনে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতীক।” যা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত হানা বক্তব্য। পূজা হিন্দুদের নিকট অতি পবিত্র একটি আচার। এর সাথে অন্য ধর্মের এমন আচারের তুলনা করা, যা তারা বিশ্বাস করে না, এটি তাদের ধর্মে সরাসরি আঘাত। একই সাথে এই কথাটি সরাসরি কুরআন ও ইসলামের আকীদা বিরোধী বক্তব্য।
পূজা বা মূর্তি পূজা করা সরাসরি শিরক - এক আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করা। এটিকে রোজার মত ঈবাদতের সাথে তুলনা করা এবং নবী-রাসুলদের সাথে মূর্তি পূজারীর তুলনা করা কোন মুসলিম, ঈমানদার ব্যক্তির বক্তব্য হতে পারে না। অথচ শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধা পেতে ইসলামিক লেবাসে সেজে শিরকের মত ভয়ংকর পাপে লিপ্ত হচ্ছে এই ধর্ম ব্যবসায়ী দলটি। তাদের এ ধরনের বক্তব্য একই সাথে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায় উভয়ের মধ্যে বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক দন্দ্ব সৃষ্ঠি করছে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই - বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মীয় অনুভূতি বা তাদের পূজা–অর্চনা করার অধিকারের প্রতি আমার কখনোই কোন অসম্মান ছিল না, নেই এবং কখনো হবে না।পূজা ও রোজাকে একে অন্যের সাথে তুলনা করা যাবে না।” এটাই বলে আমি আমার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করেছি এবং সরল প্রাণ মুসলিমদের সতর্ক করেছি। এখানে কোন হিন্দু সম্প্রদায়কে সম্বোধন বা উদ্দেশ্য করে কোন কথা বলা হয়নি।
প্রাচীন মক্কাতেও কাবা ঘরের ভেতরে মূর্তি পূজা করা হত। পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্মের লোকেরা মূর্তিপূজা করে - যা আল্লাহ আমাদের করতে নিষেধ করেন। যা আল্লাহর বিরোধী শয়তানরা চায় মুসলিমরা করুক উল্লেখিত ওই নেতার মত যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করেন এ ধরনের মানুষ রুপি শয়তানের বিরুদ্ধেই ছিল আমার বক্তব্য এখানে কোন ভিন্নধর্মালম্বির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। একজন অমুসলিম/হিন্দু ব্যক্তি তার নিজ ধর্ম অনুসারে নিজস্ব ধর্মীয় আচার পালনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রাখেন। তাদের নেতা হিসেবে প্রয়োজনে যাতে তারা নির্বিঘ্নে পূজা–অর্চনা করতে পারেন, সে জন্য সাহায্য করতেও আমি হারুন উর রশিদ প্রস্তুত ও বাধ্য! কিন্তু এর মানে এই নয় যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধা পেতে সরল প্রাণ হিন্দু–মুসলিমদের ভুল বার্তা বা ভুল শিক্ষা দেব যে শিক্ষা তাদের ধর্মগ্রন্থ বিরোধী। ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক যোগাযোগ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড - কোন ক্ষেত্রেই ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে অবমাননা করার ইতিহাস আমার নেই। তাই ভুল বুঝবেন না - যারা রোজা ও পূজাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলার মত ধৃষ্টতা ও স্পর্ধা দেখায় তাদের বিরুদ্ধে ও উদ্দেশ্য করেই ছিল আমার এই বক্তব্য, ধর্মপ্রান হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়।
এম.এ.এ/আ.আ
মন্তব্য করুন: