জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশকে হাসনাতের সাধুবাদ

 

বুধবার (২৯ অক্টোবর) এ নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট দিয়েছেন এই জুলাই যোদ্ধা। দেশবাসী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে পোস্টটি দিয়েছেন তিনি।

 

আরও পড়ুন: জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা, কী আছে আদেশে? 

সেখানে হাসনাত লিখেছেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা অবগত আছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবিতে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে। আমরা বরাবর বলেছি জুলাই সনদ স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁকা বুলি ও দলিল নয়; অবশ্যই এর আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখেই এনসিপি স্বাক্ষরের বিবেচনা করবে— এই ছিল আমাদের বক্তব্য।’ 

 

তিনি লিখেছেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, এনসিপির আপসহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায় গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করেছে। আমরা মনে করি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনসিপির অনড় অবস্থানের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি আমরা ঐকমত্য কমিশনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।’ 

 

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। 

 

হাসনাত জানান, ‘দুই ধরনের সংস্কারের জন্য স্বতন্ত্র বাস্তবায়ন রূপরেখা কমিশন পেশ করেছে। সংবিধান সম্পর্কিত নয়- এমন সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশের খসড়া কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে।’ তার দাবি, ‘কালবিলম্ব না করে অতি সত্বর এই সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ অন্তর্র্বতী সরকারকে নিতে হবে।’ 

 

তিনি লিখেছেন, ‘তবে অন্তত ৪৮ টি সংস্কার প্রস্তাব সংবিধান সম্পর্কিত। এই সংস্কারসমূহের বাস্তবায়ন রূপরেখা নিয়েই এতদিন আলাপ-আলোচনা চলছিল। সংবিধান সম্পর্কিত এ সকল সংস্কার বাস্তবায়নের নিমিত্তে কমিশন দুটি স্বতন্ত্র খসড়া সুপারিশ দিয়েছে।’ 

 

হাসনাত লিখেছেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি মনে করে, প্রথম খসড়া তথা প্রস্তাব-১ বাস্তবায়নের পথে সরকারকে যেতে হবে। কারণ এখানে ৮(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্য সম্পন্ন করতে না পারলে সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে এবং সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে। সনদের ওপর গণভোটের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা তৈরির লক্ষ্যে এটি একটি অত্যাবশকীয় সুপারিশ যার নজির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে।’ 

 

‘অন্যদিকে, কমিশন প্রস্তাবিত প্রস্তাব-২ এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই, যার দরুন গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, প্রস্তাব-২ নয়; সরকারকে কমিশন প্রস্তাবিত প্রস্তাব-১ কে বাস্তবায়ন রূপরেখা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তাব-১ এর বেশ কিছু জায়গায় ভাষিক অস্পষ্টতা বিদ্যমান, যা নিরসন করতে হবে। যেমন ৮ (ক) ধারায় বর্ণিত আগামী নির্বাচিত সভা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে নয়, ‘করিবে’— এভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। ৮ (ঘ) ধারায় সংবিধান সংস্কার বিলের বিষয়াদি ‘বিবেচনা করিবে’ এক ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করে যা দূর করা প্রয়োজন।’ 

 

‘দ্বিতীয়ত, গণভোটে প্রদত্ত ‘সংবিধান সংস্কার বিল’-এর খসড়া দ্রুত প্রণয়ন এবং জনগণের নিকট উন্মুক্ত করতে হবে।’

 

এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে- 

 

১. ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়াটি (প্রস্তাব-১) গ্রহণ করার মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

২. সংবিধান সংস্কার বিল খসড়া প্রণয়ন ও উন্মুক্তকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। 

 

৩. জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তিসম্পন্ন আদেশের খসড়া সরকার গ্রহণ করলে সনদ স্বাক্ষরের ব্যাপারে অগ্রগতি তৈরি হবে বলে এনসিপি মনে করে।

 

এদিকে বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সেখানে দলটির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া তারা সেটিতে সই করবেন না। যে কথা তাদের অন্য নেতারাও একাধিকবার বলেছেন।

 

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পেশ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এছাড়া আদেশের খসড়া গণমাধ্যমেও পাঠানো হয়।

 

তার আগে গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দিক্ষণ প্লাজায় আয়োজিত এক জাঁজজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হয়। সেদিন স্বাক্ষর করে ২৫টি রাজনৈতিক দল। পরদিন সই করে ড. কামালের গণফোরাম।

 

তবে সনদে এখনো সই করেনি জুলাই যোদ্ধাদের গঠিত এনসিপি। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা হলে সেটি জুলাই যোদ্ধা ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।