দল থেকে পদত্যাগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক শামীমা সুলতানা মায়া। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
শামীমা সুলতানা মায়া জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তিনি রাজশাহীতে মাঠপর্যায়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর থেকে দলের দায়িত্ব পালনে সততা ও জনগণের কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন সমালোচনা, মিথ্যা অভিযোগ, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং নানামুখী চাপে তার পক্ষে আর সৎভাবে দলের কার্যক্রমে যুক্ত থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে আমার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আগেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনায় প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে না পারায় পদত্যাগকেই তিনি শ্রেয় মনে করেছেন।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এনসিপি ভবিষ্যতে গণমানুষের আস্থা অর্জনে এবং স্বচ্ছ রাজনীতি চর্চায় আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। এনসিপির ওপর সাধারণ জনগণের অনেক আশা-আকাঙ্খা জড়িয়ে আছে। আমি চাই, এনসিপি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসার জায়গায় থাকুক।
পদত্যাগপত্রে শামীমা সুলতানা মায়া উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে এনসিপির রাজশাহী জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। জুলাই অভ্যুত্থানের একজন যোদ্ধা হয়ে ও এনসিপির দায়িত্ব পালনকালে আমি সর্বদা চেষ্টা করেছি নীতি, সততা এবং জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে। আমার বিশ্বাস রাজনীতি হলো জনআস্থা অর্জনের সংগ্রাম এবং মানুষের মৌলিক অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটছে এবং যেভাবে সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমার ব্যক্তিগত আদর্শ ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে। আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা, মিথ্যা অভিযোগ, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে আমি উপলব্ধি করেছি এই পদে থেকে আমার নীতিগত অবস্থান অটুট রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না।
আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না, কিংবা সরাসরি কোনো অভিযোগ তুলতে চাই না। তবে সত্য হলো আমি আমার বিবেক, সততা এবং নীতিকে কোনোভাবেই বিসর্জন দিতে চাই না। রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। তবে বর্তমান অবস্থায় যেসব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে করে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আগে আমি নিজেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাই।
অতএব, আমি এনসিপির রাজশাহী জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আমি মনে করি, এটি শুধু আমার জন্যই নয়, দলের জন্যও একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। কারণ একজন মানুষ তার বিবেকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থায় থাকলে সেই পরিস্থিতিতে সে সংগঠনকে সঠিকভাবে উপকৃত করতে পারে না।
আমি দৃঢ়ভাবে অঙ্গিকার করছি যে, ভবিষ্যতেও আমি সমাজ ও দেশের জন্য ইতিবাচক কাজ চালিয়ে যাবো। একইসঙ্গে দলের প্রতি আমার শুভকামনা থাকবে। আমি আশা করি, এনসিপি গণমানুষের আস্থা অর্জনে এবং স্বচ্ছ রাজনীতি চর্চায় আরও দৃঢ় ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে এনসিপির রাজশাহী মহানগর শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলীর মুঠোফোনে কল করে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি অন্য এক গণমাধ্যমে বলেছেন, মায়াসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আওয়ামী সংশ্লিষ্টতার বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই শেষে বিষয়টি কেন্দ্রকে লিখিতভাবে অবগত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার ধারণা এজন্যই সে আগেই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: