বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশনের কিছু বক্তব্য ও ভূমিকা ইতিমধ্যে জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে। একটি সুস্থ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এই কমিশনের মাধ্যমে সম্ভব কিনা তা নিয়ে ইতিমধ্যে জনগনের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাদের দলীয় চিন্তাকে ধারন করে বক্তব্য দিচ্ছে যা ইতিমধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে। আমরা মনে করি যে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচন কমিশনকে এই ব্যাপারে অবশ্যই সজাগ ও সর্তক হতে হবে এবং তাদেরকে নিরপেক্ষতার স্বাক্ষর রাখেতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আজগবী এলাকার ফটোগ্রাফার ইশতিয়াক আহমেদ রাফিদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও কবর জিয়ারত শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরোও বলেন, একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পেয়েছেন। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ যখন একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের আকাঙ্খা ও স্বপ্ন দেখছে। হাজার হাজার শহীদ ও ৫০ হাজারেও বেশি আহতদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি সেই নতুন বাংলাদেশকে স্থায়ী ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য নির্বাচন সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ ও বড় মাধ্যম। সুতরাং আগামী দিনে নির্বাচনটিকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য তাদের আরোও বেশি সর্তক ও সজাগ হওয়া উচিৎ। কোন দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করা তাদের জন্য কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং জনগণ কখনোই এটাকে গ্রহণ করে নিবে না।
আরেক প্রশ্নে জবাবে নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীরের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে নির্বাচনের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে যে ফ্রেম দিয়েছে অর্থাৎ ডিসেম্বের থেকে ২৬ এর জুনের মধ্যে নির্বাচন করে জনগনের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিবে। প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যেই যেন সরকার নির্বাচন দেয় কোন অজুহাতেই যেন এটি পার না হয় সেই ব্যাপারে আমীরে জামায়াতের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে। তাই আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, সরকারের টাইম ফ্রেমের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে এবং এই টাইম ফ্রেম নিয়ে যেন বিকল্প চিন্তা সরকার না করে। আমরা আরোও বলেছি নির্বাচনের আগে নির্বাচনসহ রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারগুলো আগে করতে হবে। কারণ সংস্কার ছাড়া যদি কোন নির্বাচন আগামী দিনে হয় তাহলে এই নির্বাচন জনগনের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবে না। বরং এই নির্বাচন আবারোও নতুন করে ফ্যাসিবাদের জন্ম দিবে। এজন্য আমরা বারবারই বলেছি সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে হবে এবং তার আগে ফ্যাসিস্ট অপশক্তির বিচার করতে হবে যারা গণহত্যা পরিচালনা করেছে।
তিনি আরোও বলেন, জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছে জনদূর্ভোগের কারনে জাতীয় নির্বাচনের আগে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচন দিলে একদিকে জনদূর্ভোগ দূর হবে অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের মতো জনগুরুত্ব ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ যেখানে ক্ষমতার পালাবদল হয় সেই ধরনের একটি নির্বাচনের সক্ষমতা এই অন্তবর্তীকালীন সরকার অর্জন করেছে কিনা সেটিও যাছাই বাছাই করার সুযোগ হবে স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে। এজন্য আমরা আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবী জানিয়ে আসছি।
ঢাকায় বিভিন্ন আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছরে বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনগন। তারা মন খুলে কথা বলতে পারেনি এবং বিভিন্ন দাবী দাওয়াও প্রকাশ করতে পারেনি। এছাড়া বিগত সময়ে দাবী দাওয়া করে লাভও হয়নি। রাষ্ট্রিয় নিপড়নের মাধ্যমে তাদের দাবী দাওয়ার আন্দোলনকে নসাৎ করে দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই যারা বৈষম্যের শিকার সেই মানুষ বা সেক্টরগুলো তাদের দাবী আদায়ের জন্য রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। তাই বিভিন্ন পেশার মানুষজন যখন একসাথে রাস্তায় নামে তখন যানযট তৈরি হয়। তবে এত কম সময়ের মধ্যে কোন সরকারের পক্ষেই সকল দাবী দাওয়া পূরণ করা সম্ভব নয়। এরপরেও অন্তবর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে অনেকগুলো সমস্যার সমাধানও তিনি করেছেন। আমরা আশা করছি যে, এইগুলো ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং জনগনের পক্ষ থেকেও একটু ধৈয্যশীল হওয়া উচিৎ। তবে যেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় যে, রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে। তাই নাগরিক হিসেবে আমাদের এইগুলোকে খেয়াল রাখা দরকার। আরও বেশি সর্তকতা থাকা দরকার, এই কারণে যে, দাবী দাওয়া আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কেউ যেন দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা কেউ করছে কিনা- সেই ব্যাপারেও জনগনকে সজাগ থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরীর সভাপতি ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর আবু যার গিফারী, সদর উপজেলা আমীর হাফেজ আব্দুল আলীম, পৌর আমীর হাফেজ গোলাম রাব্বানী, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা সভাপতি এনায়েত উল্লাহ, শিবগঞ্জ উপজেলা নায়েবে আমীর আব্দুল মান্নান ও রবিউল ইসলাম, চাঁপাইনবয়াবগঞ্জ পৌর শাখা সেক্রেটারি মুক্তার হোসেন, সদর উপজেলা সেক্রেটারি আব্দুর রহমান, ইসলামি ছাত্র শিবিরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পশ্চিম শাখা সভাপতি বায়েজিদ বোস্তামী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এমএএ/আআ
মন্তব্য করুন: