[email protected] ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১লা আশ্বিন ১৪৩১
thecitybank.com

জিপিএ-৫ এর বাংলাদেশ


প্রকাশিত:
১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০২:১০

ছবি সংগৃহীত
গত বছরে করোনা মহামারীর মধ্যেই এইচএসএসি বা সমমানের পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল সারাদেশে। সে সময় কাটছাঁট করা পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা দেন শিক্ষার্থীরা। এই বছরের ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি এইচএসসি বা সমমানের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এই ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৩ লাখ ৯৯ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলে সার্বিক পাসের হার ৯৫.২৬ শতাংশ। এছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১,৮৯,১৬৯ জন। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন আলিম পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৭২ জন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৭৫ জন। এই রেজাল্টে পরিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা খুশি হলেও শিক্ষা গবেষক, বুদ্ধিজীবী এবং নানান মতের মানুষ ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। আমরা সে সম্পর্কে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। ভর্তিযুদ্ধ এবং উচ্চ শিক্ষাঃ- এবারের ফলাফলে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীরা ভালো রেজাল্ট করার করাণে তাদের পছন্দের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে অসম প্রতিযোগিতা বাড়বে। কিন্ত এই ফলাফলে শুধু জিপিএ ৫ পেয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনের চারগুন!!! তাহলে জিপিএ-৫ এর বাকি তিনগুন এবং জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার কি হবে? অনেকে বলবেন তারা জাতীয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে। তার মানে আমরা এমন একটি যায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি যেখানে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের চার ভাগের তিনভাগেরই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সক্ষমতা নাই। তাহলে এতো জিপিএ-৫ দিয়ে রাষ্ট্র কি বোঝাতে চাচ্ছেন আমাদের, প্রশ্ন থেকেই যায়। আমাদের শিক্ষার মানের অবস্থাঃ- আপনাদের ছোট একটা গল্প বলি, ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে নেমে এয়ারপোর্ট থেকে এক বোতল পানি কিনেছিলেন এক ভদ্রলোক, দাম রেখেছিল ২০ হাজার রুপিয়া। টাশকি খাওয়ার মাত্র শুরু! ট্যাক্সি ভাড়া করতে গিয়ে দেখি ৩০ মিনিটের রাস্তা ভাড়া চাইছে আড়াই লাখ রুপিয়া। আসল কথায় আসি, মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে ধারণা আছে? ধরেন আপনার ঘরভর্তি টাকা। কিন্তু টাকার মান এতই কম যে এক বোতল পানি কিনতে গেলে হাজার হাজার টাকা দিতে হয় । ঐ হাজার টাকার সত্যিকারে কোন দাম নেই। ইন্দোনেশিয়ান ১ লাখ রুপিয়া বাংলাদেশি টাকায় ৬১৪ টাকা! আমাদের ঘরভর্তি এ প্লাস। কিন্তু এই এ প্লাসের দাম এবং মান এতই কম যে এটাকে মুদ্রাস্ফীতির মতই রেজাল্টস্ফীতি বলা যেতে পারে। পৃথিবীর কোন দেশেই সম্ভবত রেজাল্টস্ফীতি নেই, যেটা আমাদের দেশে আছে। বিশ্ব রর‌্যংকিংয়ে আমাদের শিক্ষার মান তলানীতে। কিন্তু ঘরে ঘরে রেজাল্টের বাম্পার ফলন। যারা দেশের শিক্ষার মানকে হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, নিত্য নতুন নিয়মের চাপে শিক্ষার্থীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছেন তারা একটাবার আকাশটার দিকে তাকান। আকাশটা বিশাল এবং সুন্দর। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতাহীন সুন্দর একটা শিক্ষার পরিবেশ দিয়ে তাদেরকেও আকাশটা দেখার সুযোগ করে দিন। আপনার ছেলেমেয়েরা তো দেশের বাইরে পড়াশুনা করে। আমাদের মধ্যবিত্ত মা-বাবাদের তো সে সামর্থ নেই। আমরা না হয় একটু দেশেই পড়াশুনা করলাম। রেজাল্টের বাম্পার ফলন না ঘটিয়ে শিক্ষার মানের একটা বাম্পার ফলন ঘটানো যায় না! জীবিকা এবং ক্যারিয়ারের দিকে দৃষ্টি রাখিঃ- বিআইডিএস’র এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৩৪ শতাংশ আর স্নাতক পর্যায়ে এই হার ৩৭ শতাংশের মতো। এর অর্থ হলো আমরা শিক্ষাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছি, যা মূলত ফলাফল কেন্দ্রিক, বাস্তব জ্ঞান কেন্দ্রিক নয়। এতে উচ্চশিক্ষার যে সর্বনাশ হচ্ছে, এ বিষয়ে এখন নিঃসন্দেহ প্রায় সবাই। অনেকেই ভর্তি পরীক্ষায় অর্থাৎ উচ্চশিক্ষার প্রবেশপথে আরও শক্ত দেয়াল তোলার পক্ষে, যাতে যেনতেনভাবে সুযোগ পাওয়া না যায়। সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ পৃথিবীর বহু দেশ থেকে বেশি। তবু চাকরীদাতারা যখন বলেন কাজের উপযোগী লোক তারা পান না তখন ভাবা দরকার পুরো সিস্টেম নিয়েই। পরিশেষে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করে শিক্ষার গুনগুত পরিবর্তন চাই। শুধু ফলাফলের জন্য আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করবে, তা যেন না হয়। শিক্ষার্থীদের গবেষণা, উদ্ভাবক এবং সৃজনশীল মুখী করার যথাযথ পদক্ষেপ রাষ্ট্র নিবে এই প্রত্যাশা রাখি। লেখকঃ মোঃ আশিক আলী তরুণ কলাম লেখক

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর