[email protected] ঢাকা | রবিবার, ৯ই নভেম্বর ২০২৫, ২৫শে কার্তিক ১৪৩২
thecitybank.com

সারা দেশে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বার ২০২৫, ১৮:২৭

প্রতীকি ছবি
প্রতিবছর বাংলাদেশে টাইফয়েডে আক্রান্ত হচ্ছে লাখো মানুষ, যাদের বেশিরভাগই শিশু। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী ১২ অক্টোবর থেকে সারা দেশে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। শিশুদের বিনামূল্যে এই টিকা দেয়া হবে ইপিআই কর্মসূচির আওতায়। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এ তথ্য জানান। 
 
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক  বলেন, টাইফয়েড একটি প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। শিশুদের সুরক্ষায় সরকার বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, যা আগামী ১২ অক্টোবর থেকে সারা দেশে বাস্তবায়িত হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এই টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। সরকারের এই উদ্যোগ কেবল শিশুদের জীবন রক্ষা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে টাইফয়েডজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
 
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যু ঘটে প্রায় এক লাখ দশ হাজার মানুষের। আক্রান্ত ও মৃতদের বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার বাসিন্দা। উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভালো থাকায় এই রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এলেও বাংলাদেশসহ বহু উন্নয়নশীল দেশে টাইফয়েড এখনো একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। দ্য গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় এবং এ রোগে প্রায় আট হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশ মৃতই শিশু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে দেশে শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টাইফয়েড টিকার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। 
 
টাইফয়েড জীবাণু স্যালমোনেলা টাইফি দ্বারা সৃষ্ট, যা মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি এবং যেখানে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ঘাটতি রয়েছে, সেখানে এর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আক্রান্ত হলে শুধু শারীরিক জটিলতাই নয়, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়, অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকিও তৈরি হয়। আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, টাইফয়েডের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অনেক অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা দিন দিন কমছে। জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, ফলে ওষুধ-প্রতিরোধী টাইফয়েডের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে টিকা গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে আগামী কয়েক বছরে টাইফয়েডের রোগী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। একইসঙ্গে ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েডের ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং পরিবার ও সমাজের ওপর অর্থনৈতিক চাপও অনেকটা কমবে।
 
বিশেষজ্ঞরা টাইফয়েডের টিকার গুরুত্ব প্রসঙ্গে জানান, একবার টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ব্যয় যেমন বাড়ে, তেমনি দীর্ঘ সময় কর্মক্ষমতা কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়ে জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে টিকা নেয়ার বিকল্প নেই।
 
ডেস্ক/ই.ই

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর