প্রকাশিত:
৯ মে ২০২৫, ১৬:১৩
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ, যা বাবা-মা দুজনই গোপন বাহক হলে সন্তানের মধ্যে রোগটি প্রকাশ পায়। এটি প্রতিরোধযোগ্য, তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই এ রোগের মূল সমাধান। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই রোগ জনস্বাস্থ্য সমস্যায় রূপ নিয়েছে, বিশেষ করে সচেতনতার অভাবে। তাই জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
১. ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি: থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিদ্যালয়-কলেজে সেমিনার ও পোস্টার-ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তথ্য পৌঁছে দিতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে যে, রক্ত পরীক্ষা করলেই থ্যালাসেমিয়া বাহকতা শনাক্ত করা যায়।
২. বিবাহপূর্ব থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা: যেকোনো বিয়ের আগে দুই পক্ষের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা আইনগতভাবে প্রণীত বা সামাজিকভাবে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এটি জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্ভব, যেমন ধর্মীয় নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক নেতাদের সম্পৃক্ত করে সচেতনতা ছড়ানো।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যশিক্ষা অন্তর্ভুক্তি: বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যশিক্ষার অংশ হিসেবে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতের পরিবার গঠনকারী, তাই আগেভাগে সচেতনতা তৈরি করাই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
৪. সহজলভ্য ও বিনামূল্যে থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং: সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে বা কম খরচে থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং সেবা চালু ও বিস্তৃত করতে হবে। একই সাথে জনগণকে এই সেবা নিতে উৎসাহিত করতে হবে।
৫. স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা: রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, ইয়ুথ ক্লাবসহ নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ ক্যাম্পেইনে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। তরুণ সমাজই পরিবর্তনের চালক, তাদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে বার্তা পৌঁছানো সম্ভব।
উপসংহার: থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে কেবল চিকিৎসক বা সরকারের একক প্রচেষ্টায় সফলতা সম্ভব নয়। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গড়ে তুললেই আমরা একটি থ্যালাসেমিয়া-মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। সচেতনতা, পরীক্ষা, শিক্ষা এবং সামাজিক ঐকমত্য—এই চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়েই জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
লেখক: ডা: এম. মুর্শেদ জামান মিঞা, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, হেমাটোলজী বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
মন্তব্য করুন: