[email protected] ঢাকা | মঙ্গলবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ই পৌষ ১৪৩২
thecitybank.com

শীতের আমেজে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধি:

প্রকাশিত:
২২ ডিসেম্বার ২০২৫, ২১:১২

নানান পদের মুখরোচক পিঠা-পুলি, ইনসেটে উদ্যোক্তা মুনজের আলম মানিক। ছবি: চাঁপাই জার্নাল

শীতের পিঠা বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালির শখের খাবার হলো পিঠা। এদেশে এমন মানুষ কমই আছে যারা পিঠা পছন্দ করে না। বাঙালির এই পিঠার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরেন্দ্র কৃষি উদ্যোগ এর আয়োজনে নানান পদের মুখরোচক পিঠা-পুলি নিয়ে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের দক্ষিণ শহরে এই পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এবং পিঠা উৎসব শেষে সাংস্কৃতিক গম্ভীরা গানেরও আয়োজন করা হয়।

সাংস্কৃতিক কর্মী  ফাইজুর রহমান মানি বলেন, মনে করেছিলাম নবান্ন উৎসব কেমন জানি, কি হবে। তবে এখানে এসে দেখলাম আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন নানীর বাড়তে দাদিরি বাড়িতে যেতাম তখন চুলার পাশে বসে নানান রকমের পিঠা আর নানান খবার দাবার করতো সেইসময় গরম গরম তুলতাম আর খাইতাম। এখানে এসে সেটাই মনে হলো তবে নামটা পরিবর্তন হয়েছে। এখানে নবান্ন উৎসব হয়েছে। আরেকটা নতুন হয়েছে নানা বা দাদির বাড়িতে আন্ডাসা খাইতাম ওটা এখানে তেল পিঠা নাম হয়েছে আর যেটা ধুপি খাইতাম সেটার নাম হয়েছে ভাপা পিঠা। ভালো লাগলো অনেকদিন পরে নানি দাদি না থাকতে পারে তবে  সেই খাবার গুলো গরম গরম খেলাম খুব ভালো লাগলো। এছাড়া যারা আমরা কৃষক আছি এই সময় তাতেই হাতে কিছু টাক থাকে। কারণ এই সময় নতুন নতুন ফসল ঘরে উঠে। তাই একটু আয়োজন করতে পারে। তাই এটা বেশি বেশি করে হোক। এটা কৃষকের জন্য হোক কারণ বাংলাদেশ একটা কৃষি প্রধান দেশ এটার প্রমান রাখতে হলে এই অনুষ্ঠানগুলো বেশি বেশি হতে হবে।

সারমিন নামের আরেকজন বলেন, এই প্রোগামটাতে আসতে পেরে আমার খুবই আনন্দিত লাগছে। এই রকম প্রোগাম আমার প্রজন্মতে সাধারন খুব একটা পাইনি। আম্মুর সাথে যখন গ্রামে বেড়াতে যেতাম তখন হইতো দেখেছি এমন পিঠা উৎসব। আসলে ঠান্ডার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভাপা পিঠা খেতে আমাদের খুবই ভালো লাগে। তাই নতুন প্রজন্ম যেন এই সব পিঠা সাথে পরিচিত হতে পারে তাই সকল প্রতিষ্ঠানের উচিত পিঠা উৎসবের আয়োজন করা।

ফিরোজ আহমেদ হিরক নামে আরেকজন বলেন, আজকে নবান্ন উৎসবে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এই আয়োজনটা চৎমকার হয়েছে। এই পিঠা পুলির উৎসব গুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা ছোট বেলায় নানি বা দাদির বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বা পুলি খাইতাম। শহরের পরিবেশের কারণে এইগুলো দিন দিন হারিয় যাচ্ছে। আবার যেটা পাচ্ছি সেটা অরিজিনাল পায় না। তাই আমাদের হারিয়ে যাওয়া উৎসবটাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ আমরা বাঙালি, আমাদের চিরন্তন ঐতিহ্যটাকে যদি ফিরিয়ে নিয়ে না আসি তাহলে আমাদের বাঙালিত্ব থাকলো না। এজন্য প্রশাসন, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের কাছে আহবান থাকবে এই অনুষ্ঠনগুলো যেন পালন করা হয়।

বরেন্দ্র কৃষি উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, নবান্ন উৎসব আসলে বাংলার ঐতিহ্য। আমরা বরেন্দ্র কৃষি উদ্যোগ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিয়ে কাজ করি। সেজন্য মাঠের কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও অনান্যদের আনন্দ করার একটা দিন বেছে নেওয়া। এছাড়া নবান্ন উৎসবটা নতুন প্রজন্মের কাছে একেবারে আলাদা। তারা আসলে এটা বুঝে না। আমাদের আয়োজনটা আসলে পরবর্তী প্রজন্মকে ম্যাসেজ দেওয়াও আরকি। তাই পরবর্তী প্রজন্মকে নবান্ন উৎসবের বিষয়ে জানানোর জন্যই নবান্ন উৎসবটার আয়োজন করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: ইয়াছিন আলী বলেন, নবান্নের উৎসব আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য। যদিও এটা যখন নতুন ধান উঠে অগ্রাহয়ন মাসে করা হয়। একটু দেরিতে হলেও আজকে তার খামারে এই ধরনের আয়োজন করেছেন। এখানে কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সাধারন কৃষক, উদ্যোক্তাসহ অনেকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। এই আয়োজনকে আমরা উপভোগ করছি এবং একই সাথে এখান থেকে আমরা শিক্ষা নিচ্ছি যে, আমরা কৃষির সাথে যারাই যুক্ত তারাই কৃষি তাকে একটি উন্নত জায়গায় নিয়ে যেতে চাচ্ছি এবং কৃষিকে বাণিজ্যিকভাবে রুপন্তিত করতে চাচ্ছি। এছাড়া আজকের আয়োজন থেকে এটাই আমরা শিক্ষা নিবো আমরা যেমন আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারন ও লালন করবো তেমনি ভাবে বাণিজ্যিক কৃষি ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের যে তাগিদ সেটাও আমরা নিশ্চিত করবো।

এম.এ.এ/আ.আ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর