প্রকাশিত:
২৬ ডিসেম্বার ২০২৫, ২০:০০
রাতের অন্ধকারে ড্রেজার আর ট্রাক্টারের গর্জনে ঘুম হারাম হয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ শহর এলাকার সাঁওতাল পাড়ার বাসিন্দাদের। দীর্ঘদিনের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী একটি পুকুর রাতের আঁধারে ভরাট করে ফেলছে একদল প্রভাবশালী মাটি খেকো গ্রুপ। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকার এই জলাশয়টি দ্রুত ফসলি জমির মাটি দিয়ে ভরাট করায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় মালিকের কাছ থেকে পুকুরটি কিনিছেন সদর উপজেলার বটতলা হাটের ধনঞ্জয়ের ছেলে শুকচান এবং পুকুরটি ভরাটের কাজ করছেন একই উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহার এলাকার মৃত রবুর ছেলে আশরাফুল ইসলাম।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত কয়েকশ ট্রাক্টারে করে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে এসে পুকুরটিতে ফেলা হচ্ছে। এই পুকুরটি ছিল পাড়ার মানুষের গোসল, কাপড় ধোয়া ও গবাদি পশুর পানির একমাত্র উৎস। কিন্তু স্থানীয় এক প্রভাবশালী ভূমিখেকো চক্র রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আইন অমান্য করে এই পুকুর ভরাটের উৎসবে মেতে উঠেছে।
পরিবেশবাদীদের মতে, দেশের জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী যেকোনো পুকুর বা জলাশয় ভরাট করা সম্পূর্ণ দণ্ডনীয় অপরাধ। এভাবে পুকুর ভরাট হতে থাকলে এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেবে।
পাড়ার এক প্রবীণ বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, "এই পুকুরটি আমাদের বাপ-দাদার আমলের। এটি কেবল পানির উৎস নয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এখন রাতের বেলা জোর করে ভরাট করা হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।"
সাওতাল পাড়ার আরেক বাসিন্দা পরশ বলেন, এই পুকুরে আমরা ছোট বেলা থেকে গোসল করতাম। বাড়ির মহিলারা থালা বাসনা ও অনান্য কাজে এই পুকুর ব্যাবহার করতো। কিন্ত কয়েকদিন ধরে ভূমিদস্যুতের নজর পড়েছে এই পুকুরে। রাতের আধারে পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। এতে আমাদের রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছে এবং পুকুরটি ভরাট হয়ে গেলে আমাদের জনজীবনের খুবই ক্ষতি হবে।
পুকুর ভরাটের দায়িত্বে থাকা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ফসলি জমি কাটা বা পুকুর ভরাটের কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। মালিকপক্ষ নিয়েছে কিনা তা বলতে পারবো না।
পুকুরের মালিক শুকচান বলেন, পুকুর ভরাটের অনুমতি নেওয়া হয়নি। অনুমতি নেওয়ার কাজ চলেছে। তবে অনুমতি না নিয়ে পুকুর ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ আফজাল রাজন বলেন, পুকুর ভরাটের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অবৈধ এই ভরাট কাজ বন্ধ করা হবে। এছাড়া রাতের আধারেও পুকুর কাটলেও দিনে জমির কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
সাঁওতাল পাড়ার সাধারণ মানুষ এখন ভূমিদস্যুদের হাত থেকে তাদের শেষ সম্বল এই পুকুরটি রক্ষায় প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন।
এম.এ.এ/আ.আ
মন্তব্য করুন: