[email protected] ঢাকা | বুধবার, ২৪শে ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ই পৌষ ১৪৩২
thecitybank.com

ফেন্সিডিলের পরিবর্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আসছে ‘চকো প্লাস ও এস্কাপ সিরাপ’

নিজস্ব প্রতিনিধি:

প্রকাশিত:
২৩ ডিসেম্বার ২০২৫, ১৭:৪৬

জব্দকৃত চকো প্লাস সিরাপ। ছবি: বিজিবির মিডিয়া সেল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ফেন্সিডিলের বিকল্প হিসেবে ভারত থেকে নতুন মাদক ‘চকো প্লাস’ (CHOCO+) ও এক্সাপ সিরাপ চোরাচালানের পরিমান বেড়েছে। বিগত কিছু দিন ধরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে এই মাদক দ্রব্য জব্দ করেছে ৫৩ ও ৫৯ বিজিবির সদস্যরা। এছাড়া এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিক সমাজ।
 
জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে একটি ফেন্সিডিলের মূল্য প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা কিন্ত চকো প্লাস সিরাপ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। তার ফলে ফেন্সিডিলের সরবরাহ কমে যাওয়া ও দাম বৃদ্ধির কারণে চোরাকারবারিরা নতুন মাদক দ্রব্য হিসেবে ভারত থেকে এই সিরাপটি নিয়ে আসছে এবং মাদকসেবীদের মাঝেও এর চাহিদা বাড়ছে।
 
বিজিবি জানায়, ভারতের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রায় ১৩১.৩ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ বিজিবির আওতাধীন ৩৭ কিলোমিটার ও ৫৯ বিজিবির আওতাধীন ২ কিলোমিটারসহ মোট ৩৯ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করা হয়নি। যার ফলে কাঁটাতারের বেড়াহীন জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে বেশি পরিমানে ঢুকছে। এটি মূলত একটি ভারতীয় কাশির সিরাপ যা ফেন্সিডিলের মতোই ‘কোডিন ফসফেট’ (Codeine Phosphate) মিশ্রিত। চোরাকারবারিরা শীতের কুয়াশা ও অন্ধকারকে কাজে লাগিয়ে এই সিরাপটি পাচার করছে এবং দাম কম হওয়ার কারণে শীত মৌসুমে চোরাচালানে এটি একটি ‘নতুন সংযোজন’।
 
উদ্বেগ ও বিজিবির অবস্থান

চকো প্লাসের পাশাপাশি ‘ব্রনোকফ সি’ ও ‘এস্কাপ সিরাপ‘ নামক আরও দুইটি  সিরাপও ফেন্সিডিলের বিকল্প হিসেবে বাজারে আসার চেষ্টা করছে বলেও জানা যায় । কোডিন ফসফেট মিশ্রিত রয়েছে সবকটিতে। নেশাজাতীয় উপাদানের কারণে এই সিরাপগুলো ভারতেও অনেক ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। আর কম দামে ফেনসিডিলের বিকল্প হিসেবে এই সিরাপগুলো সেবন করছেন উঠতি তরুণ ও যুবকরা।
 
অলকাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক টিপু সুলতান বলেন, মাদক একটি সামাজিক ব্যাধী। যা যুব সমাজকে ধংস করে দিচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে পরিমান মাদক ঢুকছে তাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না প্রশাসন। আবার নতুন মাদকের কথা শুনছি। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। তাই সীমান্ত এলাকায় বিজিবিকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় সামাজিক কমিটি গঠন করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং 'চকো প্লাস' বা এই জাতীয় নতুন মাদকের বিস্তার রোধে রাষ্ট্র, পরিবার এবং সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে।
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুলাহ আহমেদ নাজিব বলেন, মাদক যুব সমাজকে ধংস করে ফেলছে। মাদকের হাত থেকে যে কোন মূল্যে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে নতুন মাদক আসার বিষয়টি উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে এই বিষয়ে কঠোর হস্তে দমন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
 
মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, ৫৯ বিজিবির আওতাধীন সীমান্ত এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত ৫২৩ বোতল চকো প্লাস ও ৪৮ বোতল এস্কাপ সিরাপ জব্দ করা হয়েছে। সীমান্তে এই নতুন মাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সীমান্তে অনেক বড় এলাকা হওয়ার কারণে টহল দল দেখে চোরাকারবারী মাদক দ্রব্য ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে যার ফলে তাদেরকে আটক করা যাচ্ছে না। এছাড়া নতুন মাদক দ্রব্যের বিষয়ে বিএসএফকে নিয়মিত প্রতিবাদ লিপিও দেওয়া হচ্ছে।
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (৫৩ বিজিবি) লে. কর্নেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৫৩ বিজিবির আওতাধীন এলাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত ভারতীয় ৬৫৩ বোতল চকো প্লাস ও ১৫৯ বোতল নেশাজাতীয় এস্কাপ সিরাপ জব্দ করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান ঠেকাতে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এম.এ.এ/আ.আ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর