জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কিছুটা ধীরগতি থাকায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ইসি জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই এই দুটি প্রক্রিয়া শেষ হলে প্রস্তুতি শতভাগে পৌঁছাবে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশের সময় এসব কথা বলেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
ইসি সচিব মো. আখতার আহমেদ বলেন, আমাদের দুটি জায়গায় অগ্রগতি কিছুটা ধীর- রাজনৈতিক দল নিবন্ধন এবং পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন। ২২টি রাজনৈতিক দলকে প্রাথমিকভাবে বিবেচনাযোগ্য মনে করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ চলছে, আশা করছি এই সপ্তাহেই শেষ হবে।
পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর পর্যালোচনা চলছে। কিছু জায়গায় সাংবাদিকরা আমাদের তথ্যের সীমাবদ্ধতা পূরণ করেছেন, এজন্য ধন্যবাদ। আশা করছি, এই সপ্তাহেই এটি সম্পন্ন হবে।
সচিব বলেন, যদি শতকরা হিসেবে বলেন, তাহলে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ প্রস্তুতি শেষ। দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন শেষ হলে প্রস্তুতি শতভাগ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমরা সামান্য পিছিয়ে আছি, তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বাকি সময়ের মধ্যেই সবকিছু কাভার করা সম্ভব হবে।
বিএনপির জোটবদ্ধ নির্বাচনে একক প্রতীক ব্যবহারের প্রস্তাব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, এই বিষয়ে কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট। প্রতীক বরাদ্দের সময় নিবন্ধনযোগ্য রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা প্রকাশের সঙ্গে প্রতীকের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে। বর্তমানে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, কমিশন পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে।
শাপলা প্রতীক সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি বলেন, কমিশন ইতোমধ্যেই তাদের অবস্থান জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিকল্প প্রস্তাব কমিশনের কাছে আসেনি। কমিশনের অবস্থানই কার্যকর থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে আগে আরপিও সংশোধন করলেন, সংলাপে যদি কোনো প্রস্তাব আসে তাহলে আবার সংশোধন করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরপিও সংশোধনের আগে সংস্কার কমিশন দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় দেখা যায়নি। তাই অনুমান নির্ভর মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
তিনি আরও বলেন, কমিশন প্রস্তাবনাগুলো পাঁচটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছে— যেগুলো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে, যেগুলো ভাষাগত বা সংখ্যাগতভাবে সামান্য সংশোধনযোগ্য, যেগুলো রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সম্ভব নয়, যেগুলো বিদ্যমান আইনে পর্যাপ্তভাবে নির্ধারিত এবং যেগুলো কমিশনের নিজস্ব বিবেচনায় সংশোধনযোগ্য মনে হয়েছে।এই পাঁচটি দিক বিবেচনা করেই সংশোধন প্রস্তাবনাটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছে এবং তারা নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন।
গণভোটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনে এখনও পর্যন্ত কোনো গণভোট সম্পর্কিত তথ্য আসেনি। তাই অনুমানভিত্তিক কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। যে বিষয়টি কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গে আখতার আহমেদ বলেন, এটা নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটক করেছে। পুলিশ মামলা করেছে এবং তদন্ত করছে। যার কাজ, সে-ই করবে। কমিশন তার দায়িত্বেই মনোযোগ দিচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবির বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। রাজনৈতিক বিষয় কমিশনের এখতিয়ারের বাইরে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের জায়গা থেকে কাজ করছি। সবাই সহযোগিতা করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করে রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ভোট আয়োজনকারী সাংবিধানিক এই সংস্থা।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: