[email protected] ঢাকা | রবিবার, ১৫ই জুন ২০২৫, ১লা আষাঢ় ১৪৩২
thecitybank.com

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন/

অর্থ পাচারে অভিযুক্তদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ কথা ভাবছে সরকার

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
১২ জুন ২০২৫, ১৭:৪৯

প্রতীকি ছবি

বিদেশে অবৈধ অর্থ স্থানান্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিত্তশালীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে পারে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এই বিষয়ে একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, অপেক্ষাকৃত লঘু ধরণের মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আর্থিক চুক্তির পথটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প হতে পারে।

ড. মনসুর আরও ব্যাখ্যা করেন, রাষ্ট্রের সম্পদ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগে এই প্রক্রিয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল আইনি লড়াই এড়িয়ে চলতে সহায়ক হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যেসব মামলায় বড় অঙ্কের দুর্নীতি বা প্রতারণা জড়িত, সেগুলোর ক্ষেত্রে সরকার কঠোর অবস্থানে অনড় থাকবে।

তিনি বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের বাইরে গমন করা অর্থ যতটা সম্ভব ফিরিয়ে আনা। যদি কিছু ক্ষেত্রে সমঝোতার মাধ্যমে বেশি পরিমাণ অর্থ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়, তাহলে সেটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচিত হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলা যায়, বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে সমঝোতার চিন্তা-ভাবনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এদিকে, মেট্রোরেলের একক যাত্রার ২ লাখ ৪০ হাজার টিকিট হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদের সন্ধান ও ফেরত আনার উদ্যোগ জোরদার করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ধনী ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও শিল্পপতিদের একটি বড় অংশ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের—including সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার—বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইতোমধ্যে ১১টি অনুসন্ধানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মামলায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এই অভিযান মূলত গত দেড় দশকে ক্ষমতাসীনদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ শনাক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।

এই প্রেক্ষিতে লন্ডন সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি কার্যকর সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এই অর্থ আসলে চুরি যাওয়া সম্পদ। আইনত এবং নৈতিকভাবে ব্রিটিশ প্রশাসনের উচিত এই অর্থ শনাক্তকরণে আমাদের পাশে দাঁড়ানো।”

উল্লেখযোগ্য যে, সরকারের নিদর্শনায় প্রস্তুতকৃত এবং গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত একটি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনার প্রশাসনের সময়কালীন প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। এই বিপুল অর্থ বিদেশে স্থানান্তরের ফলে জাতীয় অর্থনীতির ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে, ওই সময়কালে তৎকালীন সরকারঘনিষ্ঠ একটি মহল ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য বিস্তার করে ভুয়া প্রকল্প, অতিরিক্ত মূল্যায়ন ও জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রাক্তন কর্মকর্তা এবং বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরসহ একাধিক অর্থনীতিবিদ সরাসরি দায় চেপে ধরেছেন।

ডেস্ক/আআ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর