[email protected] ঢাকা | রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১
thecitybank.com

একদফা ঘোষণার বর্ষপূর্তি আজ

যুগপৎ আন্দোলনের ছক সাজাচ্ছে বিএনপি

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
১২ জুলাই ২০২৪, ১১:২৮

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর একদফার আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও বিএনপি ও তার মিত্রদের যুগপৎ কর্মসূচি এখনো মাঠে গড়ায়নি। বিভিন্ন দল ও জোট নিজেদের মতো রাজপথে সরব থাকলেও সেগুলো ছিল অনেকটাই বিক্ষিপ্ত। দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের বাস্তবতায় এবার রাজপথে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এই ধাপে মিত্রদেরও পাশে চায় দলটি। ফলে শিগগির মাঠে গড়াতে পারে যুগপৎ আন্দোলন। সেই লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। এ ছাড়া আগামীকাল শনিবার দলের যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এসব বৈঠক থেকে আসা মতামত পর্যালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, আগস্ট মাস থেকে যুগপৎভাবে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। কিন্তু ছাত্র ও শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি মাসের তৃতীয় কিংবা শেষ সপ্তাহেই যুগপতের কর্মসূচি শুরুর চিন্তা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে প্রাথমিকভাবে লিফলেট বিতরণ, মিছিল-সমাবেশসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির পাশাপাশি দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সমসাময়িক কয়েকটি ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়া হবে। যুগপতের পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ায় থাকা দলগুলোর নিজস্ব কর্মসূচিও অব্যাহত রাখবে।

এদিকে আজ শুক্রবার ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ এবং ‘একদফা আন্দোলন’ ঘোষণার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে যুগপতের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ‘৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক ওই আলোচনায় বিএনপিসহ যুগপতের শরিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

যুগপৎ আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এরই মধ্যে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সে কারণে ৩১ দফাকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

যুগপতের লিয়াজোঁ কমিটি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সেলিমা রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব এবং আন্দোলনের একদফার গুরুত্ব মোটেই কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আমাদের নানা বক্তব্য-বিবৃতির মধ্য দিয়ে সেটা প্রতীয়মান হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘একদফা দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছিল। এরই সংক্ষিপ্তসার হিসেবে আন্দোলনের একদফা দাবিও উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু ৩১ দফাকে যে মাত্রায় গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনার কথা ছিল, সেটা হয়নি। তবে বর্তমান বাস্তবতায় ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো আবার সামনে আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’

৩১ দফার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে দেশের গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাষ্ট্র প্রশাসন যেভাবে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে, সেখানে ৩১ দফা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক, আরও জরুরি এবং আরও নতুন তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে।’

গত বছরের ১২ জুলাই রাজধানীতে যুগপৎভাবে পৃথক প্ল্যাটফর্ম থেকে এই একদফা ঘোষণা করা হয়। একদফার মূল বিষয় ছিল তৎকালীন সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে এই একদফা ঘোষণা করেছিল বিএনপি। ওইদিন গণতন্ত্র মঞ্চ ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিলেও পরদিন তা উপস্থাপন করে বিএনপি। এরপর ওই বছর ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে নামে দলটি। এর আগে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এই প্রক্রিয়ায় সব মিলিয়ে ৪০টির মতো রাজনৈতিক দল যুক্ত ছিল। দাবি আদায়ে চূড়ান্ত ধাপে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিও পালন করে বিএনপি ও শরিকরা। তবে বিএনপি ও মিত্র দলগুলোর আন্দোলন এবং বর্জনের মধ্যেই গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর গত ১২ ও ১৩ জানুয়ারি মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এরপর আগামীর আন্দোলনের কর্মকৌশল ও যুগপতের কর্মসূচি নির্ধারণে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মিত্রদের সঙ্গে ফের বৈঠক করে বিভিন্ন প্রস্তাবনা নেয় দলটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুগপতভাবে কোনো কর্মসূচি হয়নি।

এদিকে খালেদা জিয়া গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মুক্তির দাবি সামনে নিয়ে আসে বিএনপি। এই ইস্যুতে গত ২৯ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশব্যাপী মহানগর ও জেলা শহরে তিন দিনের সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। তখন বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২ জুলাই গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৮ জুলাই ভোররাতে খালেদা জিয়াকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থী এবং সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির বিরুদ্ধে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। বিএনপি এরই মধ্যে উভয় আন্দোলনকে ‘যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত’ আখ্যা দিয়ে তাতে সমর্থন জানিয়েছে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সম্প্রতি পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ অনেকের দুর্নীতির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঘটনা আলোচিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখনই আন্দোলন জোরদার করার মোক্ষম সময় বলে মনে করছে বিএনপি।

জানা গেছে, যুগপৎ কর্মসূচি নির্ধারণে গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতান্ত্রিক বামঐক্য, গণফোরাম (মন্টু)-বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) এবং এনডিএমের নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকে বিএনপির পক্ষে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।

আজ শুক্রবার লেবার পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও এলডিপির সঙ্গে পৃথক বৈঠক হবে। এতে লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত থাকবেন।

১২ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘সরকারের দুঃশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ। এখন যদি আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করা না যায়, এই সরকারের ক্ষমতা আরও দীর্ঘায়িত হবে। ফলে মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে হবে। এ জন্য আগামীতে সবরকম মত-পথের রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একমঞ্চে আন্দোলন করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই সরকারকে বিদায় করা হবে।’

সূত্র: কালবেলা/আআ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর