[email protected] ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১
thecitybank.com

তীব্র তাপদাহে আম নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি:

প্রকাশিত:
২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩৩

বোটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। ছবি: চাঁপাই জার্নাল

সারাদেশের ন্যায় তীব্র তাপদোহে পুড়ছে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। এতে বোটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। গতবারের তুলনায় এইবার আমের ফলন কম, আর আমের গুটি ঝরে পড়ায় দুশ্চিন্তায় ভুগছেন আম চাষিরা। এই বিষয়ে কৃষকদেরকে উঠান-বৈঠক, মতবিনিময় সভা, প্রশিক্ষন, মাঠ দিবস ও মসজিদে মাইকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ উপজেলাতেই আম চাষ হয়। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মুকুল দেরিতে এসেছে এবং গত বারের তুলনায় বাগানগুলোতে মুকুল কম এসেছে। যদিও সেই গাছগুলোতে গেল বছর আম এসেছিল। কিন্তু এ বছর নেই। আবার যে গাছগুলোতে আমের মুকুল ছিল সেগুলোর আবার গুটি ঝরে গেছে। গুটি ঝরা ঠেকাতে সেচ দিচ্ছেন অনেকেই। চাষিদের দাবি, কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী স্প্রে ও সেচ ব্যাবহারে আম চাষের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশানুরুপ দাম নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা।

আমচাষি মুনজের আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বা তাপাদ্রোহের কারণে আমের জন্য ভিতিকর পরিস্থিতি বিরাজমান। কৃষি অধিদপ্তর থেকে সেচের কথা বলা হলেও সেচ সব জায়গায় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেচের কারণে আম উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যখন আমের উৎপাদন বেশি হচ্ছে তখনো আমাদের মন খারাপ আমরা কাঁদছি আমের দাম পাবো না বলে, আবার আম উৎপাদন কম হলেও আমরা কাঁদছি। 

তিনি আরোও বলেন, আম নিয়ে আমাদের বিকল্প কিছু চিন্তা করতে হবে। আম প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। আমের প্রক্রিয়াকরণ না হলে আমরা আম নিয়ে আগাতে পারবো না। আমের বর্তমান বাজারমূল্য তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। আমের প্রক্রিয়াকরণ শুরু হলে তা বিশ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে দাড়াবে।

আম বাগান চাষি বিপ্লব  বলেন, এই বছর আমের মুকুল কম হওয়ার কারণে আমের পরিমান কম। এখন দিনের বেলায় আবহাওয়ার তাপমাত্রা বেশি কিন্ত রাতে তাপমাত্রা কম। এজন্য আমের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমের গাছে মহা (এক ধরণের ছত্রাক) বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি আরোও বলেন, বরেন্দ্র এলাকায় অন্য বারের মতো এইবারোও পানির সংকট আছে। পাঁচ বা সাতদিন পর পর আমের বাগান ভিজিয়ে রাখার চেষ্টা করছি যাতে আমের সাইজ ও কালার ভালো হয়, গুটি ঝরে না যায়। কিন্ত আসলে আমরা পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পাচ্ছি না। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী স্প্রে এবং সেচ দেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্ত তাতে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এই বছর আম কম আবার আম উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। তাই আমরা একরকম হতাশায় ভোগছি আমের ভালো দাম পাবো কিনা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. পলাশ সরকার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত বারের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ ভাগ মতো মুকুল কম এসেছে। প্রকৃতির বিরুপ প্রতিক্রীয়ার করণে আমরা চাষী ভাইদেরকে আম গাছে প্রচুর পরিমাণে সেচ দিতে আহবান জানাচ্ছি এবং ঠান্ডা পানি গাছে স্প্রে করতে বলছি।

এছাড়া তিনি আরোও বলেন, গত বছরের তুলনায় মুকুল কম আসলেও যতটুকু এখন আম আছে সেইটুকু টিকিয়ে রাখতে পারলে এবং কাল বৈশাখী ঝড়, শিলা বৃষ্টি কম হলে ও আম গাছে ভালোভাবে সেচ দিতে পারলে ফলন ভালো হবে আশা করছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান বলেন, অত্যাধিক গরমে আমকে রক্ষার করার জন্য সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে সকালে ও বিকেলে গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।


তিনি আরোও বলেন, যেহেতু গাছ মাটি থেকে রস পাচ্ছে না। গাছের পুষ্টির সমস্যা কারণে এক লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে আমকে ভিজিয়ে দিলে পুষ্টির ঘাটতি অনেকটায় পূরণ হবে।

এমএএ/আআ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর