[email protected] ঢাকা | সোমবার, ১৫ই ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২
thecitybank.com

এলাকায় সহজ সরল হান্নান, ছিলেন না কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত

নিজস্ব প্রতিনিধি:

প্রকাশিত:
১৪ ডিসেম্বার ২০২৫, ১৫:৫৯

ছবি: সংগ্রহীত

রাজধানীর বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট এলাকায় প্রকাশ্যে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল মালিক মো. আব্দুল হান্নান (৪৩) এর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলায়। তবে ঢাকায় তার গ্রেপ্তারের ঘটনা শুনে হতবাক এলাকাবাসী।

র‍্যাব জানায়, ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর (ঢাকা মেট্রো-ল-৫৪-৬৩৭৫) শনাক্ত করা হয়। পরে বিআরটিএর মাধ্যমে যাচাই করে মোটরসাইকেলটির মালিক হিসেবে মো. আব্দুল হান্নানের নাম পাওয়া যায়। 

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, আজ (রবিবার)  সকালে আব্দুল হান্নানকে র‍্যাব-২ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করে। আটক করার পর আজ সকালেই তাকে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

হান্নানের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ৪০ বছর আগে হান্নানের পিতার সাথে তার মায়ের তালাক হয়ে যায়। তারপর থেকেই সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা এলাকার মধ্যপাড়া এলাকার নানার বাড়িতে হান্নান ও তার ছোট ভাই সোহেলকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন তার মা মোসা: ফুরকান। ফুরকান বেগম এলাকায় কাজ করে দুই ছেলেকে বড় করেন।  হান্নান ও তার ভাই সোহেল এলাকাতেই আগে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। পরে ঢাকায় গিয়ে কন্ডাক্টরের কাজ করেন এবং পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। মাঝে মধ্যে অথবা দুই ঈদে বাড়িতে আসেন হান্নান। কিছু দিন আগে মায়ের চোখের অপারেশন করার জন্য ঢাকায় নিয়ে যান এবং তারপর থেকে হান্নানের মাও ঢাকায় বসবাস করছেন।

হান্নানের মামি শওকত আরা বলেন, হান্নানের মাকে অনেক আগেই তার বাপ তালাক দিয়েছিল৷ পরে ছোট ছোট ছেলেকে নিয়ে এসে আমরাই এখানে মানুষ করেছিলাম। মুসলমানিসহ সব কিছু দু:খ (গ্রামে কাজ করে) করে করেছিল তার মা। হান্নান ঢাকায় থাকতে শিখে কন্ডাকটর হয়েছে।  হোন্ডা নিয়েছিল এবং পরে তা বিক্রি করে দিয়েছিল। কিন্ত হোন্ডার নাম কাটাইনি। এজন্য ছেলেকে ধরে বন্দি করে রেখেছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

তাজেমুল নামের এক বাসিন্দা বলেন, হান্নানের মাকে ছোট বেলায় ছেড়ে দিয়েছিল। তারপর তার মা মামুদের কাছে নিয়ে এসে কষ্ট করে হান্নানকে মানুষ (বড়) করেছে। বড় হয়ে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। রাজমিস্ত্রির কাজ করতে করতে কন্ডাকটর এর কাজ শুরু করে। হান্নান ছেলে এলাকায় খুবই ভালো। কোন কাইজ্জা ফ্যাসাদের (ঝগড়া) সাথে যুক্ত নাই এবং তার মামারাও ভালো। পরে আমরা শুনছি সে নাকি ধরা পড়েছে। এছাড়া সে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নই এবং কিছুদিন আগেও তার মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে গেছে। সে পরিবার নিয়েই ঢাকায় থাকে।

আরেক এলাকাবাসী মোস্তফা বলেন, হান্নান খুবই ভালো ছেলে। তার মা তাকে খুব কষ্ট করে মানুষ করেছে। সে প্রায় ২০ বছর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকজন ঢাকায় নিয়ে গিয়ে কন্ডাক্টর এর কাজ করে। এছাড়া এলাকাতে তার নানার বংশও বড় নই এবং কোন ভিলেজ পলেটিক্স বা রাজনৈতিক দলের সাথে সে বা তার নানার বংশও জড়িত নই।

বাঙ্গডাঙ্গা সুন্দরপুর ইসলামিয়ে হাফেজিয়ে ও নূরানী মাদ্রাসার শিক্ষক গোলাম আরিফ বলেন, আব্দুল হান্নান নিরিহ ছেলে। সে কোন প্রকার অকারেন্স এর সাথে জড়িত নই। যতটুকু দেখেছি সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। অভিজ্ঞতা হওয়ার পর সে ঢাকায় কন্ডাকটর এর কাজ করেন। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাচ্ছি।

সুন্দরপুর ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়াডের ইউপি সদস্য মো: নুরুল ইসলাম বলেন, হান্নান কন্ডাকটরি করে ঢাকাতে। আজ থেকে ১০ থেকে ১৫ বছর আগে থেকেই ঢাকাতে থাকে সে। ছেলের তো আমরা তো কোন দোষ দেখতে পাই না। বছরে দুই বা তিনবার গ্রামে আসে। সে ও তার পরিবার কোন দল পার্টির সাথে জড়িত না।

তিনি বলেন, এখন আমরা যে ঘটনাটি শুনছি তা শুনে আমরা রীতিমতো হতবাক। সে সহজ সরল ছেলে। তার কোন মোটরসাইকেল এর ব্যাবসাও করতো না। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাচ্ছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ ) মোঃ একরামুল হক বলেন, আমরা এই বিষয়টি শুনেছি। তার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিচ্ছি। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

এম.এ.এ/আ.আ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর