সামান্য বৃষ্টিতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকার নালা (ড্রেন) উপচে পড়ে নোংরা পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। কোথাও পানি নামতে কয়েক ঘণ্টা, আবার কোথাও কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এ সময় নোংরা পানি ঠেলেই চলাচল করতে হয় পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শহরের প্রধান খালগুলো দখল ও সংকুচিত হওয়া, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং পরিকল্পনাহীন নগরায়ণের কারণে শহরের জলাবদ্ধতা দিন দিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার রাতভর বৃষ্টিতে বাতেন খাঁ মোড়, শান্তিমোড়, আরামবাগ, উদয়নমোড়, নিউমার্কেট, ক্লাব সুপার মার্কেট, ডিসি মার্কেট, পুরাতন বাজার ও রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পানিতে ডুবে গেছে। ঘরের সামনে পানি জমে অনেকে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। কারও রান্নাঘর ও টিউবওয়েল পানির নিচে চলে গেছে, এমনকি কিছু ছাত্রাবাসেও পানি ঢুকে পড়েছে।
স্থানীয়দের মতে, অপর্যাপ্ত নালা ব্যবস্থাপনা, বিদ্যমান নালার অচলাবস্থা এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বহু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অপরদিকে পৌরসভা জানিয়েছে, মেশিনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রাতুল হাসান বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই শহর হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
গণমাধ্যমকর্মী ফারুক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর। এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফল।
আরামবাগ এলাকার বাসিন্দা রিদয় বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, পৌরসভা নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করে না। নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে জলাবদ্ধতা অনেক কমে যেত। শুধু ড্রেন বানালে হবে না, রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তোফিকুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কয়েকটি স্থানে ড্রেনের কাজ চলছে। এজন্য হঠাৎ বৃষ্টিতে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে মেশিনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। ড্রেনের কাজ শেষ হলে এ সমস্যা দূর হবে।
পৌরসভার শহর পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসাইন বলেন, শহরের ড্রেনগুলো নব্বইয়ের দশকে নির্মিত হয়েছিল তখনকার চাহিদা অনুযায়ী। এখন জনসংখ্যা বাড়ায় পানি নিষ্কাশনের চাপও বেড়েছে। এজন্য ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে। আশা করছি, কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকটা কমে আসবে।
খাল খননের উদ্যোগে আশার আলো:
শহরের মধ্য দিয়ে নবাব, নয়াগোলা ও রেলওয়ে বরো পিট নামের তিনটি খাল প্রবাহিত। কিন্তু দখল, দূষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খালগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে, ফলে বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে না। এ অবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড খালগুলো পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর খালগুলো পুনঃখননের একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণে ২০ কোটি ও তিনটি খালের (১২ কিলোমিটার) পুনঃখননে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের পিডি নিয়োগ ও জমি অধিগ্রহণের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। কাজ শেষ হলে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে।
ড্রেন পুনর্নির্মাণে নতুন পরিকল্পনা:
শহরের অধিকাংশ ড্রেন নব্বইয়ের দশকে নির্মিত, যা দিয়ে আগে মহানন্দা নদীতে পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণের পর দূষিত পানি সরাসরি নদীতে না ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, শহরের পানি নবাব, নয়াগোলা ও রেলওয়ে বরো পিট খালের মাধ্যমে নিষ্কাশন করা হবে। এজন্য ড্রেনগুলোর গতিপথ পরিবর্তন ও সংস্কার কাজ চলছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, মহানন্দা সেতুর সংযোগ সড়ক প্রকল্পের আওতায় সরকারের অর্থায়নে ৩০৩ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। কাজ শেষ হলে অধিকাংশ এলাকার পানি তিনটি খালের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হবে। কিছু এলাকার পানি ট্রিটমেন্টের পর রাবার ড্যামের ভাটির অংশে ফেলার পরিকল্পনাও রয়েছে। এতে নদীর দূষণও কমবে।
পৌরসভার শহর পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন বলেন, রাবার ড্যাম থাকার কারণে ড্রেনের পানি সরাসরি নদীতে ফেললে দূষণ বাড়বে। তাই ড্রেনগুলো সংস্কার করে পানি খালগুলোতে ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে নদী দূষণ কমবে, শহরের জলাবদ্ধতাও নিরসন হবে।
এম.এ.এ/ই.ই
মন্তব্য করুন: