রাতের বৃষ্টির শঙ্কা কাটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে রোদঝলমলে আবহাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহীদ সাটু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মিলনায়তন মুখর হয়ে ওঠে। দিনভর নানা আয়োজনে শিক্ষার্থীরা ছিল উচ্ছ্বসিত।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলো এই সংবর্ধনার আয়োজন করে। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করে। প্রবেশপথের বুথ থেকে কার্ড, নাশতা ও ক্রেস্ট নিয়ে তারা উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উপাচার্য শফিকুল বারী, আইপিডিসি-প্রথম আলো আয়োজিত প্রিয় শিক্ষক সম্মাননার জন্য মনোনীত চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন। প্রথম আলো সম্পাদকের পক্ষে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নওগাঁ প্রতিনিধি ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষার্থীদের মিথ্যা, মুখস্থবিদ্যা ও মাদককে ‘না’ বলার অঙ্গীকার করান।
এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উপাচার্য শফিকুল বারী বলেন, ‘এসএসসিতে সাফল্য অর্জন করা তোমাদের একটি স্বপ্ন দেখার প্রথম স্বীকৃত ধাপ। জীবনে স্বপ্ন দেখতে পারাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তোমরা স্বপ্ন দেখো। স্বপ্নপূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করো, স্বপ্ন সফল হবে।’ প্রথম আলোকে তিনি শিক্ষাবান্ধব উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
আলীনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘জীবনে উৎসাহ, প্রেরণা ও সম্মাননা পাওয়া খুবই কাজে লাগে। আমি ২০০৮ সালে জিপিএ-৫ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় থেকে মাত্র একজন ছাত্রীকে নিয়ে এসেছিলাম। এখন আমার বিদ্যালয়ে এসএসসিতে শতভাগ পাস হয়। কয়েক বছর থেকে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়। তিন বছর থেকে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে আসছে। এবারও জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে।’
অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা নাচে-গানে মেতে ওঠে
অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা নাচে-গানে মেতে ওঠেছবি: প্রথম আলো
নাচোল উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম হাকরইল থেকে মা সাবিনা সরেনকে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় কৃতী শিক্ষার্থী সিমতি মুর্মু। জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনসহ অন্য সহপাঠীদের নিয়ে গোমস্তাপুর উপজেলার শ্যামপুর থেকে আসে আলিনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারমিন খাতুন।
অনুষ্ঠানে আসা হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থী শাহাদৎ হোসেন বলে, ‘আমি নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলে। মা–বাবার সম্মান রাখতে আমি ভালো করে লেখাপড়া করেছি। তাই আজ এখানে আসতে পেরেছি।’
শিবগঞ্জ উপজেলার ফ্রিডম স্কুল অ্যান্ড কলেজের কৃতী শিক্ষার্থী নাফিসা আক্তার বলে, ‘এখানে এসে খুব আনন্দ হচ্ছে। এমন অনুষ্ঠানে আগে কখনো আসা হয়নি। দিনটির কথা মনে থাকবে অনেক দিন।’
অনুষ্ঠানে থিম সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে বন্ধুসভার পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান ও রামিজ আহমেদ অন্তর। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কবিতা আবৃত্তি করে সুমা প্রামাণিক, মনিকা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার দপ্তর সম্পাদক আসেফ উৎস। নৃত্য পরিবেশন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কোল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সীমার বাহা শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার অন্তর ও তৈনি। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আবু রিত্তিকা কনা, শিক্ষার্থী সালমা খাতুন ও সাদিয়া তাসনিম। এ সময় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে বই উপহার দেওয়া হয়।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় ছিল কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: